প্রতিবন্ধীকে দিয়াশলাইয়ের আগুন ও সিগারেটের ছ্যাঁকা

প্রতিনিধি
বাবার মৃত্যুর পর নানার বাড়িতেই থাকেন। সড়ক দুর্ঘটনায় মা রোকেয়া বেগমও হারিয়েছেন মানসিক ভারসাম্য। একমাত্র ছেলে আলমগীরের সুখ-দুঃখ বোঝার সক্ষমতাও নেই তার। অযতœ অবহেলায় বেড়ে উঠেন আলমগীর হোসেন। বয়স ১৫ বছর। মানসিক প্রতিবন্ধী। তাকে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে নির্যাতন শেষে শরীরে দেওয়া হয়েছে দিয়াশলাইয়ের আগুন ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা। আলমগীর কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের ভাজনকরা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে। এই ঘটনায় মঙ্গলবার পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছেঁড়া পোশাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান আলমগীর। মানুষের দেওয়া খাবারে ক্ষুধা নিবারণ করেন। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর আলমগীরকে স্থানীয় কিছু যুবক মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে আটকে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ভাজনকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। নির্যাতনে স্থানীয় যুবক রাহুল, রবিন, বাপ্পি, হৃদয়, দিদার, আলম ও সানাউল্লাহর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন আরো কিছু যুবক। হাতের কাছে যে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। লাঠি, লোহার রড, বেত্রাঘাত, কিল-ঘুষি ও লাথি মেরেই ক্ষ্যান্ত হননি তারা। একপর্যায়ে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তার সমস্ত শরীরে দেওয়া হয়েছে দিয়াশলাইয়ের আগুন ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা। এতে তার পিঠসহ শরীরের প্রায় প্রতিটি জায়গায় তৈরি হয়েছে ক্ষত। নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই কিশোরের নানা আব্দুল কুদ্দুস। তিনি চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে আবদুল কুদ্দুস উল্লেখ করেন, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আটকে রেখে আলমগীর হোসেন(১৫) নামের মানসিক প্রতিবন্ধীকে রোববার সন্ধ্যার পর থেকে দফায় দফায় নির্যাতন করেন কতিপয় বখাটে যুবক। নির্যাতন শেষে তাকে বেওয়ারিশ দেখিয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করিয়ে চলে যায় তারা। সোমবার সকালে ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন।
অভিযুক্ত রাহুল জানান, ‘আমার সাথে তার কোনো শত্রুতা নেই। ওর বিরুদ্ধে এলাকার অনেকেই চুরির অভিযোগের কথা বলতে শোনা গেছে। তাকে ধরে এলাকার সবাই স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য মারধর করেছে। আমি না শুধু এ ঘটনায় এলাকার অনেকেই ছিল।’
আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্যাতিত কিশোরকে নিয়ে তার নানা ও পরিবারের লোকজন আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদেরকে ছেলেটির চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। আইনি সহায়তা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘ভুক্তভোগী কিশোরের নানা অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’