প্রতিষ্ঠাতাকে ভুলে গেছে ভিক্টোরিয়া কলেজ

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। ১২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠের প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়। গত ৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠাতার শততম মৃত্যুবার্ষিকী অতিবাহিত হয়েছে।

যার অবদানে এ কলেজ তার শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে কলেজ প্রশাসনের কোন আয়োজন দেখা যায়নি। ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর অনেকেই জানেন না প্রতিষ্ঠাতার নাম। তার জীবনী গ্রন্থ নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তার নামে নেই ভবন, আবাসিক হল, কক্ষ, মিলনায়তন বা জীবনী সম্বলিত স্মৃতি ফলক। কলেজ ওয়েব সাইট ও উইকিপিডিয়া খুঁজেও রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়ের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এনিয়ে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

 

রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়

সংবাদে উল্লেখ করা হয়, উচ্চমাধ্যমিক শাখার মূল ফটকে শ্বেতপ্রস্তরের তৈরি প্রতিষ্ঠাতার আবক্ষমূর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ইংরেজি বর্ণে লিখা আছে রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়। জন্ম ২৪.১১.১৮৬৩, মৃত্যু ৮.১১.১৯২০ । এ হিসাবে ২০২০ সাল ছিলো কলেজের প্রতিষ্ঠাতার শততম মৃত্যুবার্ষিকী। এছাড়া ভিক্টোরিয়া কলেজের উভয় ক্যাম্পাসের ৩২ একর ভূমির কোথাও প্রতিষ্ঠাতার জীবনী স্থাপন করা হয়নি। ১২১ বছর পরও সংরক্ষণ করা হয়নি প্রতিষ্ঠাতার জীবনী গ্রন্থ। কলেজের ইতিহাস নিয়ে দ্’ুএকটি বই প্রকাশিত হলেও স্থান পায়নি প্রতিষ্ঠাতার জীবনী। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এ যুগের কিংবদন্তি গ্রন্থে তিতাশ চেধুরী বইয়ের প্রবেশক অংশে লিখেছেন, ১৯৮১ সালে এ কলেজের সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য সাপ্তাহিক সচিত্র স্বদেশ প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এতে অধ্যক্ষ ক্ষব্ধ হন। সম্পাদককে উকিল নোটিশ পাঠান।


কলেজের ওয়েব সাইটে কলেজের ইতিহাস, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কথা ও প্রতিষ্ঠাতার নাম স্থান পেলেও স্থান পায়নি প্রতিষ্ঠাতার জীবনী। এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লার নাগরিকরা।

এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতার শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে কলেজের শিক্ষক, ছাত্রসহ সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তবে কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের কোন বার্তা দেখা যায়নি।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা সভাপতি বদরুল হুদা জেনু মনে করেন, যিনি কলেজের জন্য জমি দিলেন, অর্থ দান করলেন তাকে স্মরণ না রাখা খুবই দুঃখজনক বিষয়। প্রতিবছর তার জন্মবার্ষিকী বড় আয়োজনে পালন করা যেতে পারে।

কলেজের প্রতিটি ভবনের সামনে প্রতিষ্ঠাতার ছবিসহ তার সংক্ষিপ্ত জীবনী স্থাপন করা যেতে পারে। তিনি কুমিল্লার লাকসামের কৃতি সন্তান। তার জীবনী কর্ম বিষয়ে একটি বই রচনা করা খুবই প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠাতার নামে পাঠাগার, মিলনায়তন, ভবন, সড়ক ও হলের নাম করা যেতে পারে। মেধা বৃত্তি চালু করা যেতে পারে। তা না হলে নতুন প্রজন্ম প্রতিষ্ঠাতাকে ভুলে যাবে। আর অতীত ভুলে যাওয়া মানে নিজেদের ভুলে যাওয়া। একই সাথে এ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে আলাদা বই থাকতে পারে। কার আমলে সৃজনশীল বা ব্যতিক্রমী কাজ হলো। কি উন্নয়ন হলো তাও লিখা থাকতে পারে।

আমরা মনে করি লাকসামের এই কৃতি সন্তান ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ চন্দ্র রায় বাহাদুরকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়া উচিত। গুণীজন সম্মানিত না হলে আরেকজন গুণীজন হয়তো এগিয়ে আসবেন না মানব সেবায়।