ফুটওভার ব্রিজ গুলো যেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন!

আবদুল্লাহ আল মারুফ ।।
লোহার পাতগুলোতে মরিচা। সিঁড়িতে মাটির আস্তর। পাশে জন্মেছে ঘাস। এ যেন কোন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। চলার পথে যেন হকার ভিক্ষুকের মিছিল। ব্রিজের সঙ্গে ঝুলে আছে বড় বড় ব্যানার পোস্টার। ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধে ব্যবহার অনুপযোগী। এতে করে ফুটওভারব্রিজ থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন পথচারীরা। বাড়ছে ঝুঁকি ঘটছে দুর্ঘটনা। এমন বেহাল অবস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ফুটওভার ব্রিজ গুলোর। মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১৬টি ফুটওভারব্রিজ পরিদর্শন শেষ এমন তথ্য জানা গেছে।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ ১০৫ কিলোমিটার। এই ১০৫ কিলোমিটারে সময়ের প্রয়োজনে ও সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ১৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলোর হাতে গোনা কয়েকটি নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে। বাকি গুলোতে তেমন পথচারীর দেখা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে ব্যানার পোস্টার, ধুলাবালি, অনিরাপত্তা, ছোট আকারের সিঁড়ি, ভিক্ষুকদের উৎপাত, হকারদের দখল করা, বৈদ্যুতিক তার ঝুলে থাকা, বখাটেদের উৎপাতসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশিরভাগ ফুটওভার ব্রিজেই ব্যানার পোস্টার দেখা গেছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্টার ব্যানার ঝুলে আছে এসব ফুটওভার ব্রিজে। কুমিল্লা অংশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ফুটওভার ব্রিজের একটি পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকায়। এটিতে ১২মাসই হকার ও ভিক্ষুকের দখল দেখা যায়। পথচারীদের মনোযোগ কাড়তে তারা সিঁড়ির ঠিক মাঝ বরাবর বসে। এতে করে পথচারীরাও হাটতে বেগ পেতে হয়। কিছু ভিক্ষুক পথচারীদের পা ধরে বসে থাকে। এতে বিব্রবতকর পরিস্থিতিতে পড়েন অনেকে। তাই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। আবার ছোট আকারের সিঁড়ির কারণে অনেকের পা পিঁছলে যাওয়ার ভয় থাকে।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মহাসড়ক পার হওয়াদের একজন মো. রফিকুল ইসলাম। পঞ্চাশঊর্ধ্ব রফিক প্রায়শই মেয়েকে দেখতে শ^শুর বাড়ি আসেন। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ তিনি ব্যবহার করেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্রিজের সিঁড়ি অনেক খাড়া। তাই একটানা উঠলে শ্বাস উঠে যায়। তখন নামাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই একটু দেখেশুনে হাতের ইশারায় তিনি সড়ক পার হন।
চৌদ্দগ্রাম বাজারের পাশ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের সামনে ও এইচ যে সরকারি ফাইলট মডেল হাই স্কুলের ফটক। দুই প্রতিষ্ঠানের ফটকের দূরুত্ব ৪০০ হাত। অথচ দুই প্রতিষ্ঠানের সামনেই আছে ফুটওভার ব্রিজ এবং দুইটি ব্রিজই পোস্টারে ভর্তি। কুমিল্লার চান্দিনা বাজার, দাউদকান্দি বাস স্ট্যান্ডসহ প্রায় সব এলাকার ফুটওভার ব্রিজের একই অবস্থা।
চৌদ্দগ্রাম ফুটওভার ব্রিজের পাশ্ববর্তী এক ব্যবসায়ী বলেন, এসব ব্রিজে তেমন কেউ উঠেনা। রাতে বখাটেরা আড্ডা দেয়। দিনেও আড্ডা দেয়। কারণ এসব ব্রিজের ওপরে কি হচ্ছে তা নিচ থেকে বুঝার উপায় নেই। আশপাশে ব্যানার দিয়ে ভর্তি।
পদুয়ার বাজার এলাকা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত লালমাইয়ের সজিব মাহমুদের। তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ি গুলি খাড়া। আমরা ইয়াং মানুষ। আমাদের যেই কষ্ট হয় আর যারা বয়স্ক তাদের কি অবস্থা হবে। এই ফুটওভার ব্রিজের নোয়াখালীগামী সড়কের ডান পাশের সিঁড়ি গুলো ব্যবহার করা মুশকিল। একইতো বাঁকা। তার ওপর কয়েক ইঞ্চি লম্বা। এটা ভয়ানক। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সড়ক ও জনপদ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, ফুটওভার ব্রিজের জন্য আলাদা কোন লোক নেই। আমরাই দেখতে হয়। আমরা কয়েকটি রং করেছি। বাকি গুলিও রুটিন মতো করা হবে। সেগুলো আমাদের নজরে আছে।