বিদেশিদের ভিড় কুমিল্লার খাদি দোকানে

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি বিদেশিদের মন কেড়েছে। প্রায় কুমিল্লার খাদি দোকানে তাদের ভিড় দেখা যায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমন দৃশ্য দেখা যায় নগরীর রাজগঞ্জ এলাকায়। খাদিঘর নামের একটি দোকানে দেখা যায়, ১০ দেশের নাগরিকের ভিড়। তার মধ্যে রয়েছে মালেয়শিয়া,থাইল্যান্ড, ইরান,  ঘানা, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া ও মরিশাসের নাগরিক।
সূত্র জানায়, পৃথিবীর যেখানে বাঙালি আছে সেখানে পৌঁছে গেছে খাদি। তাদের মাধ্যমে সেখানের অবাঙালিদের মাঝেও খাদি জনপ্রিয় হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে(বার্ড) সার বছর বিভিন্ন দেশের মানুষদের নিয়ে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। বিদেশিরা প্রশিক্ষণের অবসরে কুমিল্লার ঐতিহ্য খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন। শালবন বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখেন। কেউ রসমালাই কিনেন। কেউ দল বেঁধে আসেন খাদি দোকানে।
বার্ডের যুগ্ম পরিচালক কাজী সোনিয়া রহমান বলেন, বার্ড ও সিরডাপের আয়োজনে ১০দেশের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে প্রায় এক মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ চলছে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্স ফ্লাগশিপ প্রোগামে প্রশিক্ষণার্থীরা অংশ নিয়েছেন। ঐতিহ্য বললে প্রথমে কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের নাম আসে। আজ তাদের খাদিঘরে নিয়ে এলাম। তারা কমদামে ঐতিহ্যবাহী পোশাক কিনে খুবই খুশি।  দোকানে ঘিয়ে দেখা যায়, অর্ধ শতাধিক বিদেশি ক্রেতাকে নিয়ে গলদঘর্ম বিক্রেতারা। কেউ হয়তো ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না,তাই দোকানি ক্রেতার চাহিদা আকার ইঙ্গিতে বুঝে নিচ্ছেন। কেউ শাড়ি,কেউ থ্রিপিস,কেউ পাঞ্জাবি দেখছেন। টাকা কম থাকায় কেউ ডলার বের করছেন।


ভারতের ঝাড়খান্ডের ড. রাজেশ সিনহা ও শ্রীলংকার দিনুশা বলেন, প্রশিক্ষণে এসে সবার মুখে খাদির সুনাম শুনেছি। তাই অবসরে দেখতে এলাম। খাদি দেখতে সুন্দর, দামও কম। তাই পারিবারের জন্যও নিয়েছি। কুমিল্লার একটা স্মারক নিতে পেরে ভালো লাগছে।
প্রবীণ ব্যবসায়ী খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, পৃথিবীর যেখানে বাঙালি কমিউনিটি আছে সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে। কুমিল্লায় যেসব বিদেশি আসেন তারাও খাদির কাপড় কিনছেন। তারা পরে আরামবোধ করছেন বলে জানান। এটা হাতে তৈরি কাপড় হওয়ায় পরে একটা ন্যাচলাল ফিল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশীয় পণ্যের প্রদর্শনী করলে তা পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।
কুমিল্লার ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে একশ’ বছরের বেশি সময় আগে। ওই সময় শুধু খাদি কাপড় নয়, কুমিল্লার বেনারসি শাড়িরও তুমুল চাহিদা ছিল। সারা বিশ্বেই কুমিল্লার শাড়ি ও খাদি কাপড়ের নামডাক ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত-সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। একে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা জরুরি।
উল্লেখ্য,কুমিল্লার খাদির পোশাক ও রসমলাইয়ের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। কুমিল্লায় আসলে খাদি কাপড় ছাড়া খালি হাতে ফিরেছেন এমন লোক কমই পাওয়া যাবে। বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক থেকে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা পর্যন্ত এসব দোকানের অবস্থান।