বিলের শাপলা আর মাছে জীবিকা

মাহফুজ নান্টুঃ
পুরো বিলজুড়ে শাপলার হাসি। কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের ঘুরগার বিল। বিলের যে দিকে চোখ পড়ে সেদিকেই শুধু শাপলা। বিলে সকাল সন্ধ্যা শাপলা ফুলের হাসি লেগেই থাকে। সাদা শাপলার সাথে দোল খেলা করে কতশত জলজ গুল্ম। বিলের সবুজ শাপলার পাতার উপরে লাফ দেয় দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ। এই ঘুরগার বিলের দেশীয় ছোট মাছ আর শাপলা বিক্রি করে চলে শতাধিক মানুষের সংসার।
ঘুরগার বিলে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃত প্রান্তরজুড়ে পানি আর পানি। শতাধিক মানুষ নৌকায় ঘুরে বেড়ায়। কাল থেকে সন্ধ্য-সন্ধ্যা থেকে রাত। যাদের কাজ শাপলা সংগ্রহ করা। জাল দিয়ে মাছ শিকার করা। সংগ্রহ করা এসব শাপলা ও ছোট মাছ বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে ।
বিলের মাঝে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় শাপলা তুলছেন দিদার হোসেন। বাড়ি বিলের প্বার্শবর্তী কংগাই এলাকায়। দিদার হোসেন জানান, ঘুরগার বিলে তিন চার মাস পানি থাকে। এ সময় প্রচুর শাপলা ফুল ফুটে। বিলের পানিতে তিনিসহ অনেকেই শাপলা সংগ্রহ করেন। ৪-৫ টি শাপলা দিয়ে একটি করে আটি বাধেন। প্রতি আটি ৫ টাকা করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮শ টাকার শাপলা বিক্রি করেন। শাপলা বিক্রির টাকায় পরিবারে স্ত্রী-এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার চলে যায়।
বিলের একপাশে ডিঙ্গি নৌকায় বসে থাকতে দেখা যায় শাহিন মিয়াকে। জাল পেতে বসে আছেন। জালে ধরা পড়ে ছোট চিংড়ি, কই, টাকি, পুটিসহ অন্যান্য দেশীয় মাছ। শাহিন মিয়া জানান, শাপলার ডগা দিয়ে চিংড়ি মাছের তরকারী বেশ সুস্বাদু।
শাহিন মিয়া জানান, সকালে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বিলে আসেন। আসার সময় বউ ভাত তরকারী দিয়ে দেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মাছ ধরা। পরে দুপুরে বাড়ি থেকে আনা ভাত খেয়ে আবারও শুরু করেন মাছ ধরা। বিকেলে মাছ নিয়ে যান স্থানীয় বাজারে। মাছ বিক্রি করেন। এই মাছ বিক্রির টাকায় শাহিন মিয়ার সংসার চলে।
প্রতিদিন ঘুরগার বিলে নৌকা ভ্রমণে আসেন শত দর্শনার্থী। নিরব নিস্তব্দ বিলে চিল, ডাহুক, বক, সারসসহ কত রকম পাখির আনাগোনা। তার মাঝে আনন্দ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। আর বিলের মাঝে শাহিন-দিদাররা ব্যস্ত সময় পার করেন মাছ ধরা ও শাপলা সংগ্রহে।