ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকল্প বাগাতে অপতৎপরতার অভিযোগ


এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে তৎপর এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ পাইয়ে দিতে এলজিইডি কার্যালয়কে ম্যানেজ মিশনে একটি সিন্ডিকেট জোরালো অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, এমন অভিযোগ স্থানীয় ঠিকাদার মহলের। ‘কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সড়ক সংস্কার কাজের মান খারাপ, গতিও ধীর’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ, নিরাপত্তা জামানত ফেরতপ্রাপ্ত ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার কাজ প্রদান না করার দাবি সচেতন মহলের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইড) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় গত ৯ জানুয়ারি জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের গুজিয়াখাই বাজার-কাঁঠালকান্দি গ্রাম হয়ে কচুয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের একটি দরপত্র (আইডি নং ১০৬৫১২৫) আহ্বান করে। হয় যার প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ কোটি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৯ টাকা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দরপত্র খোলার পর জানা যায়, উক্ত পক্রিয়ায় মোট চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ‘সৈকত এন্টারপ্রাইজ’ নামীয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসর, তার স্বামী একজন চরমপন্থী এমন খবর জাতীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত। খবরে প্রকাশ, ‘সৈকত এন্টারপ্রাইজ’র স্বত্ত্বাধিকারী মোসা. সাহেদা বেগম দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত মুকুলের (প্রকৃত নাম আমিনুল ইসলাম) স্ত্রী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। সৈকত এন্টারপ্রাইজ বিরুদ্ধে ‘দৌলতপুরে সড়ক সংস্কার কাজের মান খারাপ, গতিও ধীর’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ০৯ জুন’১৯ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে প্রায় আট কোটি টাকা বরাদ্দের কাজটি জোরাতালি দিয়ে চলার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট খোদ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় স্বীকার করেন। এলজিইডি ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক আহ্বানকৃত টেণ্ডারে (আইডি নং ৮৭০৮৫০) মূল্যায়ণ কমিটির মূল্যায়ণ যথাযথ ও বিধিসম্মত না হওয়ায় রিভিউ প্যানেল-৫ এর চেয়ারপার্সন ও সদস্য যৌথ স্বাক্ষরে (০৮.০১.২০২৪) সৈকত এন্টারপ্রাইজ’র নিরাপত্তা জামানত ফেরত প্রদানের সুপারিশ করায় পূর্ব অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা না থাকার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা জামানত ফেরত দেয়া হয়। এহেন বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি’র আহবানকৃত দরপত্রমূলে নাসিরনগর উপজেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দিতে একটি সিণ্ডিকেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি কার্যালয়কে ম্যানেজ করার মিশনে চালচ্ছেন অপতৎপরতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের কয়েকটি ব্রীজসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ ঝুলিয়ে রেখেছেন এমন এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরাও বিতর্কিত ‘সৈকত এন্টারপ্রাইজ’র সাথে সম্পৃক্ত। সৈকত এন্টারপ্রাইজকে কাজ পাইয়ে দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি কার্যালয়কে ম্যানেজ করার মিশনে একটি সিন্ডিকেট জোরালোভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন এমন খবর ঠিকাদার মহলে চাউর আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঠিকাদার মহল এবং সচেতন এলাকাবাসী মনে করছেন, যেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ; এমন প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের রাস্তার কাজ একেবারেই ভেস্তে যাবে। সঙ্গত কারণেই বিতর্কিত ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যাতীত অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজের দায়িত্ব প্রদান করলে স্থানীয় এলাকাবাসীর স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এমদাদুল হক’র নিকট এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দরপত্রের মূল্যায়ন পর্যায়ে মূল্যায়ন কমিটির কোনো সদস্যের ক্ষেত্রে কমিটির বাইরের কারোর সাথে দরপত্র বিষয়ে কথা বলাই অফেন্স মানে ফৌজদারী অপরাধ।নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে আমি যেহেতু কমিটির সদস্য, সুতরাং ১০৬৫১২৫ নং দরপত্রের বিষয়ে এর বেশি কোনো মতামত আমি দিতে পারছি না।’