ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমির জন্য ভাই-ভাতিজার নামে মামলা

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ। এর জেরে ইটালি প্রবাসীর মামলার ফাঁদে নাজেহাল তারই ভাই-ভাতিজারা। বহিরাগতদের বাদী করিয়ে আপন ভাই-ভাতিজা-ভাতিজী-ভাবীকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামের ইটালী প্রবাসী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে শনিবার (২২ আগস্ট) হয়রানীর শিকার পরিবারের সদস্যদের সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়নের বিশিষ্ট লোকজনও যোগ দিয়ে মামলায় আনা অভিযোগের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
জানা যায়, গত ১৯ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (নবীনগর) আদালতে প্রবাসী তাজুল ইসলামের একটি জায়গার লিজ গ্রহিতা মো. দুলাল মিয়া বাদী হয়ে তাজুলের বড় ভাই আবু শামীমের তিন পুত্র কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক, সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন, মাষ্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন এবং তাদের মা লুৎফা বেগমকে আসামী করে গাছ চুরি ও বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ মেরে ফেলার অভিযোগে মামলা করেন। জেলা সদরের গোকর্ণঘাটের মো. গনি মিয়ার ছেলে আরশ মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ২০১৯ সালের ২৩ আগষ্ট তাকে মারধর ও পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক, তার দু-ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন ও মাষ্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন, চাচা আবু তাহেরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দেন। এর আগে প্রবাসী তাজুল ইসলাম নিজেই গত বছরের ১৭ জুন নবীনগর থানায় বড় ভাই আবু তাহের, ভাবী আলেয়া বেগম, ভাইস্তি তানিয়া আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে জায়গাজমি দখল ও হত্যার হুমকী দেয়ার অভিযোগ করেন।
তাজুল ইসলাম, তার নির্দেশনামতে দায়েরকৃত এসব মামলার সকল অভিযোগ উদ্ভট বলে দাবী করেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান,সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন, সমাজসেবক মো. খোরশেদ আলম, মাহবুবুর রহমান, আতিকুর রহমান, কুদ্দুস মোল্লাসহ গোটা এলাকার মানুষ।
বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তৃতীয় ব্যক্তিরা এসব ঘটনায় জড়িত। গাছ কেটে নেয়া বা জায়গা দখলের কথা আমরা শুনিনি।’ সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে ২০ বছরের চুক্তিতে স্কুলের জায়গাটি নিয়েছি। আবু তাহেরের সাথে তাদের কোন সমস্যা নেই। তার ভাই তাজুল ইসলামই তাকে স্কুল থেকে উঠিয়ে দিতে আমাদের চাপ সৃষ্টি করেন। এতে রাজী না হওয়ায় ২০১৯ সালে আরশ মিয়া নামে একজনের কাছে জমি ভাড়া দিয়ে দেন তাজুল ইসলাম। পরে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের সাথে একটি চুক্তি করে এবং বলে দোকান থেকে তাহের মিয়াকে উঠানোর বিষয়ে আরশ মিয়া বুঝবে।’ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জায়গাজমি নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ,আমরা এর সমাধান চাই।’ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মামলাগুলোর মধ্যে সত্যের কোন লেশমাত্রও নেই।’ বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সদস্য জীবন মিয়া বলেন, ‘যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সত্য নয়।’ ইটালী প্রবাসী মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘হয়রানিমূলক ভাবেই এসব মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে। একটা এতিম ছেলেকে মামলা দিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। মানিকদের পরিবারের ওপর উল্টো অত্যাচার চলছে। এসব করে গ্রামের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।’
আবু তাহের বলেন,’আমি স্কুল পরিচালনা কমিটি থেকে আমি ২০ বছরের জন্য দোকান ভাড়া নিয়েছি। স্কুল সংশ্লিষ্ট কারো সাথেই আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক আমাকে দোকান থেকে উচ্ছেদের জন্যে এসব করেছেন। তার কারণে আমি জেল খেটেছি। আমাদের বাড়িতে ঝামেলাও তারই কারণে।’ প্রবাসী তাজুল ইসলামের ভাবী-সাবেক ইউপি সদস্য লুৎফা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেরা কেউ বাড়িতে থাকেনা। একবছর ধরে দুলাল, নূরুল ইসলাম, তপন ও আরশ আলী এসে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। বলছে, তাজুলের জায়গায় পা দিলে আমারে কিয়ামত করে ফেলবে।’ কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক, তার ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন বলেন, ‘আমরা যখন কর্মস্থলে দায়িত্বে নিয়োজিত, তখনই আমাদের করা হয় মামলার আসামী! অথচ আমরা এসবের কোনোকিছুই জানি না।’ এদিকে সরেজমিনে এলাকায় ঘুরে জায়গা দখল কিংবা গাছ কাটার কোন প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক (ভিপি এনাম) বলেন, ‘এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। আমি এটি মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি।’