ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লইসকা বিলে দুর্ঘটনায় ডুবন্ত ট্রলারটি উদ্ধার 

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লইসকা বিলে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী ট্রলারটি অবশেষে উদ্ধার হয়েছে। তিনদিন পর রোববার (২৯ আগস্ট) সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমের সহায়তায় উদ্ধারকারী দল নদীর তলদেশ থেকে ক্রেনের মাধ্যমে ট্রলারটি উদ্ধারে সক্ষম হন। এরই মধ্য দিয়ে ঘটলো উদ্ধার কাজের পরিসমাপ্তি। এর আগে শনিবার দুপুরে ডুবন্ত ট্রলার থেকে উদ্ধারকৃত ২২ জনের মরদেহ শনাক্তশেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস এণ্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারি পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার দুর্ঘটনার পর পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে এবং ২২জনের মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর রোবাবার সকালে ২০ টনের একটি চেইনকপ্পার মাধ্যমে ডুবন্ত ট্রলারটিকে পানির নীচ থেকে উপরে উঠানো হয়। ট্রলারের ভেতরে, নিচে বা আশপাশের কোথাও কোনো মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য শুক্রবার বিকেলে বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে আনন্দবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রলারটি জেলা শহরের অনতিদূরে তিতাস নদী সংলগ্ন লইসকা বিলে বালুবাহী ট্রলারের সংঘর্ষে ডুবে যায়। বেশিরভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে ওঠতে সক্ষম হলেও নারী-শিশুসহ অনেকে তলিয়ে নিখোঁজ হন। শনিবার দুপুর নাগাদ ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার হয় যাদের বেশিরভাগই শিশু এবং মহিলা। নিহতেরা হলেন বিজয়নগর উপজেলার আদমপুরের শিশু তিথিরা বিশ্বাস (২), অঞ্জলী বিশ্বাস (৩০), চম্পকনগরের আরিফ ভূইয়া ওরফে মামুন ভূইয়া (২০), গেরারগাঁওয়ের মঞ্জু বেগম (৬০), ফরিদা বেগম (৪০), তার মেয়ে মুন্নী আক্তার (৬), রৌশনারা বেগম (৪০), নূরপুরের মিনারা বেগম (৩৭), বড়পুকুরপাড়ের রুবিনা আক্তার (৩২), সোনাবর্ষিপাড়ার নুসরাত জাহান (২৮), বাদেহারিয়ার মাইদা আক্তার (৬), মণিপুরের হাজী সিরাজুল ইসলাম সিরু (৫৮), জেলা শহরের দক্ষিণ পৈরতলার মোমেনা বেগম (৫৫), উত্তর পৈরতলার কাজলী বেগম (৩২), নাফসা আক্তার (৩), দাতিয়ারার তাসফিয়া মীম (১২), সাদেকপুরের তানভীর হোসেন (৮), গাছতলার সাজিম (৭), ভাটপাড়ার  শারমিন আক্তার (১৮), চিলিকোটের তাকওয়া আক্তার (৮), ময়মনসিংহ জেলার ঝরণা বেগম (৫৫) এবং শিশু সাজিদ (৩)।
ট্রলারডুবির কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দু’জন হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা ও ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার কথা রয়েছে। এদিকে ঘটনার পর বালুবোঝাই ট্রলারটির চালক-সহযোগীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারসহ দু’টি বাল্কহেড জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের শোলাবাড়ি গ্রামের আলী আফজলের পুত্র জমির মিয়া (৩৩), আবদুল করিমের পুত্র মো. রাসেল (২২), মো. কাশেম মিয়ার পুত্র খোকন মিয়া (২২), আশরাফ আলীর পুত্র মো. সোলায়মান (৬৪) এবং বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের কালারটেক গ্রামের হাজী তালেব আলীর পুত্র মিস্টু মিয়া (৬৭)। নারকীয় এই ঘটনায় বিজয়নগর উপজেলার গেরারগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল হাসিমের পুত্র মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে নিহতদের পরিবারেরর পক্ষে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনসহ সাতজনের নামোল্লেখে বিজনগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন জানান, ‘রোববার সকালে ডুবন্ত ট্রলারটি উদ্ধারের মধ্য দিয় উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। এর আগে উদ্ধারকৃত ২২ জনের মরদেহ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরকালে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার চাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ঘটনায় সম্পৃক্তের দায়ে পাঁচজন গ্রেপ্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি কার্যক্রম চলমান, সোমবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার কথা রয়েছে।’