মাছ শিকার উৎসবে রঙিন গোমতীর বুক

 

মাহফুজ নান্টু ।
গোমতীর নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের কারো হাতে পলো। কারো হাতে কনুই জাল। কেউবা এসেছেন বেড় জাল নিয়ে। সময় বাড়ার সাথে সাথে মৎস্য শিকারিদের ভিড় বাড়ছে।

বছরের ফাগুন ও চৈত্র মাসে গোমতীর পানি কমে তলানিতে জমা হয়। সেই সময়টাতে গোমতীর বুকে চলে মৎস্য শিকার উৎসব। সোমবার এমন মৎস্য উৎসবে যোগ দিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিকারিরা ভিড় করেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী কটক বাজার। গোমতীর এই অংশ দিয়ে অন্তত পাঁচশ’ সৌখিন মৎস্য শিকারি পানিতে নেমে পড়লেন। হৈ-হৈ রবে চারদিক মাতিয়ে তুললেন। কেউ কনুই জাল ছুড়ছেন। কেউবা হাতের পলো চেপে ধরছেন পানিতে।
কিছুক্ষণ পরেই কারো জালে ধরা পড়ছে কার্ফ্যু, কারো জালে বাগাড়। কেউবা পলোতে চেপে ধরছেন বড় রুই মাছ। জেলার নাঙ্গলকোট থেকে আসা শৌখিন মৎস শিকারি নাছির উদ্দিন গোমতীর টিক্কারচর ব্রিজের নীচে অন্তত ৬ কেজি ওজনের একটি কার্ফ্যু মাছ পেয়েছেন।
নাছির উদ্দিন বলেন, আমি যহন পলডা লইয়া বাড়িত থাইক্কা আই। হেসুমকালা আমার মাইয়াডা কয় আব্বা দোয়া পইড়া দিলাম। তুমি একটা বড় মাছ পাইবা। আমার মাইয়ার কডাটা ফলছে। মাইয়ার জামাইডা বাইত আইছে। এত্তবড় মাছটা দেখলে অক্করে বেজায় খুশি হইবো।
গোমতী নদীতে কখনো জোয়ার আসে না। পানি কম থাকলেও নদীজুড়ে বিচরণ করে কার্ফ্যু, কাতল, রুই, বোয়াল, বাগাড়, গলদা চিংড়ি, বাইমসহ আরো বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ। এ বছর মৎস্য শিকারিদের জালে কার্ফ্যু ছাড়াও বাগাড়, কাতল রুই ধরা পড়েছে প্রচুর।
চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর থেকে আসা তাহের মিয়া বলেন, একটা ঘন্টা পলোডা চাপছি। আৎকা একটা লাড়া দিলো। আরো চাপ দিয়া ধরছি। আমার ভাতিজা শাহিন আর আমি তিন কেজি ওজনের রুইত মাছটা পাড়ো তুলছি।

চান্দিনা থেকে আসা অটোরিকশা চালক হামিদ মিয়া বলেন, ২ কেজি ওজনের একটা বাগাড় মাছ পাইছি। মানুষে বাগাড়টা কিনতে কয়। আমি বেচি নাই। মাছতো বেচতাম পাইরাম কিন্তু কিন্না খাইতাম পারতাম না। টেকার লোভ করি নাই।
বছরের এই সময়টা গোমতীর বুকে মাছ ধরা উৎসব চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কালের পরিক্রমায় নদীতে মাছের সংখ্যা কমে এলেও মৎস্য শিকারীদের উৎসবে ভাটা পড়েনি এতটুকু।


গবেষক ও লেখক আহসানুল কবীর বলেন, গোমতীতে মাছ ধরার উৎসবটি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। এক সময় গোমতীতে বড় বোয়াল, বাগাড়, চিতল, কালিবাউশ, রুই কাতল পাওয়া যেতো। যেগুলো নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হতো। তবে সময়ের পরিক্রমায় কমেছে গোমতীর পানি ও মাছের আনাগোনা। এখন যৎসামান্য কিছু মাছ পাওয়া যায়। যদি গোমতীকে শাসন না করে পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন করা যেতো তাহলে গোমতী তার আগের রুপ ফিরে পেতো। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হতো।