মাধবীলতা রঙিন নয় সাদা!

মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
মাধবীলতা। দেশীয় ফুল। তবে বর্তমানে তা প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এছাড়া ফুলটি তার পরিচয় সংকটে ভুগছে। রঙিন মধু মঞ্জুরি ফুলকে অনেকে মাধবীলতা বলে জানেন। এটি মূলত সাদা রঙের। শৌখিন বাগানি এবং সংরক্ষণাগার ছাড়া তেমন দেখা মেলে না। ঢাকার কার্জন হল প্রাঙ্গণ, রমনা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছটি আছে বলে জানা যায়। কুমিল্লায় ইতোমধ্যে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ভিক্টোরিয়া ডিগ্রি কলেজ শাখার ক্যাম্পাসে এই ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। কুমিল্লা গার্ডেনার্স সোসাইটির পরিচালক ডা. আবু নাঈম কুমিল্লায় গাছটি চেনানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি চান মানুষ যেন প্রকৃত মাধবীলতা চেনেন ও সংরক্ষণ করেন।


তিনি বলেন,মাধবীলতা ফুলের পাঁচটি পাপড়ি, তার মধ্যে পঞ্চম পাপড়িটির গোড়ার দিক হলদেটে। ফুল দেখতে তিল ফুলের মতো এবং সুগন্ধি। বসন্ত ও গ্রীষ্ম এ ফুলের ঋতু হলেও কখনও কখনও বর্ষা পর্যন্ত ফোটে। ফুল থেকে ফল হয় যা সামারা নামে পরিচিত, ফলে ২-৩ টি বীজ থাকে এবং তা রোমশ। বীজের মাধ্যমে এবং কাটিং এর মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হয়। খুব কম লোকেই এই মাধবীলতা গাছকে চেনেন। মাধবীলতা এক সময় ময়মনসিংহে প্রচুর পাওয়া যেত। মাধবীলতা বৃক্ষারোহী লতা এবং দীর্ঘজীবী। ডাল ছোট ছোট এবং ঝোপঝাড় হয়ে যায়। এভাবে বহুবর্ষী হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়ে যায়। ডাল দু-তিন বছর পরপর কেটে দিতে হয়, তারপর লতা যতই বাড়তে থাকে ততই নতুন নতুন ডালপালা গজায়, ফুল বেশি ফোটে। এর মোটা মোটা ডালের ছাল মেটে রঙের, ভেতরের কাঠ লালচে ও শক্ত।

বাগানের শোভার জন্য যত্ন করে মাধবী লাগানো হয়।
খুব অল্প দিনের মধ্যেই সমস্ত ফুল ফুটে যায়। এতে ফুল দেখার সুযোগ কমে যায়। তাই রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় লিখেছেন-‘মাধবী হঠাৎ কোথা হতে এল ফাগুন-দিনের স্রোতে।/এসে হেসেই বলে, “যা ই যা ই যাই।’/পাতারা ঘিরে দলে দলে তারে কানে কানে বলে,/”না না না।’/নাচে তা ই তা ই তাই।/’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক তাপস দত্ত বলেন,আমি একজন বাগানি। তবে মধু মঞ্জুরিকে মাধবীলতা বলে জানতাম। বাগানি নার্গিস আক্তার,জাহাঙ্গীর আলম,মোশারফ হোসেনসহ ডা. আবু নাঈমের বাগানে গিয়ে প্রকৃত মাধবীলতা চিনলাম।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন,অনেক বাগানিও মাধবীলতা চিনেন না। মাধবীলতা টিকিয়ে রাখতে ও প্রকৃত মাধবীলতা চেনাতে সচেতনদের উদ্যোগী হতে হবে।