মা মর্জিনার ব্যতিক্রমী যুদ্ধ

আবু সুফিয়ান রাসেল।।
জন্মলগ্ন থেকেই বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ইয়াছিন আরাফাত। বড়বোন মাহমুদা আক্তারও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। ভাই-বোন দুইজনের রয়েছে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সুবর্ণ নাগরিক কার্ড। দিনমজুর বয়োবৃদ্ধ বাবা একাধিক বার হার্ট অপারেশনের পর কোন কাজ করতে পারেন না।
সংসারের হাল ধরার কেউ নেই। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুরের কান্দুঘর গ্রামে তাদের বাড়ি। বাড়ি বলতে শুধুই ঘরভিটেই আছে। বাবা আব্দুল আউয়াল পরের জমিতে কাজ করতেন। অপারেশনের পর শুধু হাঁটাচলা ছাড়া তেমন কাজ করতে পারেন না। গ্রামে খেয়ে না খেয়ে দিন যেত তাদের।
গ্রাম থেকে চলে আসলেন শহরে। ভাড়া বাসা নিয়েছেন শাসনগাছা ঈদগাহ সংলগ্ন মাস্টার পাড়ায়। মা মর্জিনা বেগম পড়েছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। নিজে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেননি, তবে সন্তানদের এসএসসি পাশ করানোর খুব ইচ্ছা মায়ের। তাই ভাই-বোনকে ভর্তি করিয়েছেন গুলবাগিচা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে। নিজে নেমেছেন কর্মের খোঁজে। তবে শহরে কাজ পাওয়া সহজ নয়। আবার অন্যের কাজ করে নিজের অসুস্থ স্বামী আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলে মেয়েকে দেখা শোনা করাও কঠিন। স্বল্প শিক্ষিত এ মা জানেন ভিক্ষাবৃত্তি মহাপাপ। তাই প্রতিববন্ধী সন্তানদের দিয়ে ভিক্ষার পথ অবলম্বন করেননি। প্রতিবেশী থেকে ১৫শ’ টাকা ধার করে, ১২শ’ টাকা দিয়ে ওজন মাপার যন্ত্র ক্রয় করেন। কিশোর ইয়াছিনকে নিয়ে নগরীর ধর্মসাপাড় সে যন্ত্র নিয়ে বসেন। ওজন মাপার যন্ত্রের সামনে লিখা আছে, প্রিয় ভাই বোনেরা আমি একজন বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী । ওজন মেপে আমাকে সাহায্য করুন। এ থেকে পথচলা। ওজন মেপে কেউ পাঁচ টাকা, কেউ দশ টাকা দেয়। সে টাকায় চলে কিশোর ইয়াছিনের খাবার আর চিকিৎসার খরচ।
পাশেই মা মর্জিনা বেগম বসেছেন ব্যতিক্রম কিছু পণ্য দিয়ে। দেশী মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল, চাষের মধু, অমলকি, চিরতা, কলোজিরা, পাঁচ পোড়নসহ কিছু পণ্য। এতে যা লাভ হয়, তা দিয়ে জীবন যাপন করেন।
ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সম্পা ইয়াছমিন বলেন, বছরেরও বেশী সময় ছেলেটাকে পার্কে দেখছি। তার বয়সী আমার একটি ছেলে আছে, মনে হয় আমার ছেলেটি বসে আছে। ইয়াছিনের মায়ের কাছ থেকে এ সমাজের অনেক কিছু শিখার আছে। ভিক্ষা নয়, কর্ম করেই খেতে হবে, মা তার সন্তানকে এ শিক্ষাই দিচ্ছেন। আমি যতটুকু পারি তাকে সাহায্য করি। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, নিজ অবস্থান থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।
কিশোর ইয়াছিন আরাফাতের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ভিক্ষা নয় কর্ম করে খেতে চাই। আমি মেয়র স্যারের সাথে কথা বলেছি, তিনি আশা দিয়েছেন পার্কে একটা ছোট টং দোকানের জায়গা দিবেন। যদি তা পাই, আপনাদের সহযোগিতায় কিছু মালামাল নিয়ে ব্যবসা করে খেতে চাই।