মুক্তিযোদ্ধার কবর উচ্ছেদ চেষ্টায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা 

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর উচ্ছেদের চেষ্টার ঘটনায় মামলা হবার পর ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক প্রদত্ত আদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভূক্তরা হলেন জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন চৌধুরী, তার ছোট ভাই ইমান উদ্দিন চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরীসহ আটজন। এই নিয়ে এলাকায় ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।
জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের কবর উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন চৌধুরী।এ ঘটনায় প্রয়াতের ছেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম নিজে বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে দ্রুত বিচার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার আমল গ্রহণের পর বিজ্ঞ বিচারক আল আমিন প্রদত্ত আদেশে সকল আসামীর বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের পূর্ব পুরুষ আব্দুল লতিফ প্রায় ৮০ বছর পূর্বে মসজিদের জন্যে জায়গা ওয়াকফ্ করে এর পশ্চিম দিকে কবরস্থানের জায়গা রাখেন। ওয়াকফ্কৃত জায়গায় গড়ে ওঠে সুবিশাল মসজিদ। আবার লাগোয়া কবরস্থানে দীর্ঘদিন যাবৎই স্থানীয়দের লাশ দাফনও করা হচ্ছে। এরই মাঝে বিগত ২০২০ সালে সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম মারা গেলে তাকে সেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাজুল ইসলামের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম এবং বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও কেউই পাননি। পরে সাঈফ উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করলেও দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় সাইফুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এরপর থেকেই মূলত সাইফুলের পরিবারের প্রতি বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিনের আক্রোশ শুরু। পূূর্বপুরুষের দানকৃত জায়গায় গড়ে ওঠা মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের কবর এখানে না রাখার দাবী করেন ইউপি চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন অযুহাতে গ্রামবাসীকেও বুঝিয়েছেন। এই নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ছয়জন আইনজীবীর উপস্থিতিতে শালিসি সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা পণ্ড করে দেন চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন। পরে উপায়ান্ত না দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের ছেলে আদালতের স্মরণাপন্ন হলে, আদালত কবরস্থানের জায়গায় ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু গত ২৭ আগস্ট আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন তার ভাইদের নিয়ে অবৈধভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের কবর উচ্ছেদের পর সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখলের চেষ্টা করেন। এই খবরে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী প্রাচীর দেওয়া বন্ধ করেন। এরই জেরে একই দিন অ্যাডভোকেট সাইফুল চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন তার ভাইদের এবং অন্যান্য লোকজন নিয়ে কবরস্থানের পাশে পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে সাইফুলকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এই ঘটনায় অ্যাডভোকেট সাইফুল জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও সাঈফ উদ্দিনের অপতৎপরতা থেমে থাকেনি। তৎপ্রেক্ষিতে ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার দ্রুত বিচার আদালতে মামলা দায়েরের পর চেয়ারম্যানসহ সব আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জন আইনজীবীকে উপস্থিত রেখে সালিশী সভায় বসলেও আমার বাবা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের আইন, শেখ হাসিনা ও নৌকা প্রতীক নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাসহ পেশীশক্তি দেখিয়ে চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন সেই সভা পণ্ড করে দিয়েছেন।’ শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈফ উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তারা মসজিদের নামে জায়গা দিয়েছে। আবার সেই জায়গা থেকে ৬ শতাংশ তাদের নামে বিএস খতিয়ানভূক্তও করেছে। আমি কোনো অনৈতিক কাজে জড়িত নই। প্রয়োজনে মসজিদ কমিটির কাছে থাকা কাগজপত্র দ দেখে যেতে পারেন।’