যেভাবে বিলুপ্ত সুন্দরীর পাড়ের বক্সগঞ্জ বাজার

সাইফুল ইসলাম সুমন।।
বক্সগঞ্জ বাজার। এক সময় এ বাজারে বিক্রি হত মণের পর মণ ধান, গম, পাট। বিক্রি হত গরু, ছাগল, ভেড়া এমন কি ঘোড়াও। শতবর্ষী এ বাজারটি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখন প্রায়ই বিলুপ্ত। বাজারটি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল মডেল ইউনিয়নে অবস্থিত। যা এক সময় হাটপুকুরিয়া বাজার নামে পরিচিত ছিল।


সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রায় ১০০ বছর পূর্বে সোনা মিয়া চেয়ারম্যানের দাদা সফর আলী প্রধানীয়া বক্সগঞ্জ বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। সোনা মিয়া চেয়ারম্যানের আমলে এসে বাজারটির জৌলুস আসে। বাজারের পাশেই সুন্দরী খাল। এ বাজারে দূর দূরান্ত থেকে নৌকা যোগে ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা নেয়া করতেন। ৩০০/৪০০ মণ ধারণ করা নৌকা দিয়ে ধান নিয়ে আসতেন। হাটের দিন সুন্দরী খালের পাড়ে ১৫০-২০০টি নৌকার সিরিয়াল থাকতো। এ বাজারে মতলব, নায়েরগাঁও, নারায়ণপুর, দাউদকান্দি, গৌরিপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনা, বরুড়া, লালমাই, হাজীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নৌকাযোগে এসে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। সপ্তাহে দুই দিন হাট বসত। হাটে ধান, গম, পাট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও ঘোড়া বিক্রি হত।
জলপথের অবনতি হওয়ায় বাজারটি বর্তমানে বিলুপ্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। একসময় যে বাজারটি ছিল লোকে লোকারণ্য, এখন সে বাজারটি জন মানবশূন্য। যে বাজারে দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করত, এখন বাজারে বলতে গেলে দোকানও বসে না। বাজারে ২/৪ টি চায়ের দোকান থাকলেও বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে।

স্থানীয় শিক্ষক মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন, বাজারের পাশে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় কিছু লোকজন এখনো আসা যাওয়া করে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাজী রুহুল আমিন জানান, সুন্দরী খাল ঘেঁষে বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নৌকা করে ধান, গম, পাট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও ঘোড়া বিক্রি করতে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে সেসবের চিহ্ন নেই বললেই চলে।

স্থানীয় অধিবাসী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, তৎকালীন কালীন সময়ে কচুয়াসহ আশপাশের উপজেলায় বক্সগঞ্জ বাজারের নাম ডাক ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দোকান হওয়ায় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বক্সগঞ্জ বাজারটি বিলুপ্ত হয়েছে।
শতোর্ধ্ব বয়সী আলী হোসেন সরকার জানান, আমি ছোট বেলা থেকেই এ বাজারটি জমজমাট দেখেছি। নৌকা দিয়ে অনেক দূর থেকে লোকজন এসে মালামাল ক্রয় বিক্রয় করতেন। কিন্তু নৌকার চলাচল না থাকায় বাজারে এখন লোকজন আসে না।

বর্তমানে বক্সগঞ্জ বাজারের দুটি সড়ক পাকাকরণের কাজ চলমান রয়েছে। পাকাকরণ করা হলে হয়তো বাজারটি প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা করেছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান মুরাদ বলেন, জনগন যদি আর্থিকভাবে লাভবান হয় তাহলে বক্সগঞ্জ বাজারটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।