রাণীর দিঘিতে টলটলে জল চায় নগরবাসী

চরছে ছাগলের পাল
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
রাণীর দিঘি। এক সময় ছিলো কুমিল্লা নগরীর সবচেয়ে সুপেয় পানীয় জলের উৎসস্থল। এই দিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। এর তিনপাড়ে রয়েছে বসতি। দিঘিরপাড় ছিলো স্বাস্থ্যকর এলাকা। সেই দিঘিটি দীর্ঘদিন শুষ্ক অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে জন্মেছে গাছ। চরছে ছাগলের পাল। টলমলে জলে পুকুরটি যেন ভরে থাকে, তার পাড়ে দাঁড়ালে যেন স্নিগ্ধ বাতাস আবার দেহমনে দোল দিয়ে যায়,সেই পরিবেশের প্রত্যাশা নগরবাসীর।
ইতিহাসবিদ ও স্থানীয় সূত্র জানায়,কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় সংলগ্ন স্থানে ১৬৬৯-১৬৭৫সালের মধ্যে দিঘিটি খনন করা হয়। এটি খনন করেন ত্রিপুরার রানীর জাহ্নবী দেবী। এটি ছিলো নগরীর সবচেয়ে সুপেয় পানীয় জলের উৎস। বিভিন্ন সময় এটি প্লাস্টিক আর আবর্জনায় দূষিত হয়ে পড়ে। এবার দীর্ঘদিন ধরে এটি শুষ্ক অবস্থায় পড়ে আছে। খালি পড়ে থাকতে থাকতে রানীর দিঘির যৌবনা রূপের স্মৃতি অনেকে ভুলতে বসেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,রাণীর দিঘির বুকজুড়ে ঘাসের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই গো-চারণ ভূমি না দিঘি। সেখানে চরছে ছাগলের পাল। কয়েকজন ঘাস কেটে নিচ্ছেন তার গবাদি পশুর জন্য।
নগরীর প্রবীণ বাসিন্দা প্রদীপ কুমার রাহা বলেন,রাণীর দিঘিকে খালি দেখতে আমরা অভ্যস্থ নই। সংস্কার শেষে এটিকে তার পূর্ব রূপে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়া হোক।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন,নগরীর প্রাচীন দিঘির অন্যতম ধর্মসাগর দিঘি ও নানুয়ার দিঘি। এগুলো ১৪৫৮সালে খনন হয়। ত্রিপুরার রাণী জাহ্নবী দেবী প্রজাদের পানীয় জলের জন্য ১৬৬৯-১৬৭৫সালের মধ্যে রাণীর দিঘিটি খনন করেন। এই ঐতিহাসিক দিঘিটি যতেœ থাকুক। টলটলে জলে পরিপূর্ণ থাকুক।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাসার ভুঞাঁ বলেন, এই দিঘির সাথে কয়েক প্রজন্মের শৈশব জড়িয়ে রয়েছে। এখানে আমরাও কত সাঁতার কেটেছি। দিঘিটির ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পাড়ে সংস্কার কাজ বাকি রয়েছে। এই দিঘির সাথে কলেজের একটি মেলবন্ধন রয়েছে। দিঘিতে অনেক মাটি জমেছে। অনুমতি পেলে আমরা মাটি তুলে কলেজের খেলার মাঠ সংস্কার করতে পারতাম। তাহলে দিঘিটি আরো গভীর হবে। দিঘিটির দ্রুত প্রাণ ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা করছি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন,রাণীর দিঘির পাড়ের কিছু সংস্কার কাজ চলছে। সামনে বর্ষাকাল। এমনিতেই এটি পানিতে ভর্তি হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমরা পাম্প চালিয়েও পানি দিতে পারবো।
