কুমেক হাসপাতালে বিনামূল্যে হোমিও চিকিৎসা, জানেন না রোগীরা

সাইফুল ইসলাম সুমন।।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে স্বল্প খরচে আধুনিক পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। মাত্র ১০ টাকায় টিকিট কেটে রোগীরা পাচ্ছেন রোগ নির্ণয়ের সুবিধা এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ। চিকিৎসা খরচের দিক দিয়ে এটি দেশের অন্যতম সাশ্রয়ী সরকারি স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০১৫ সালে কুমেক-এ হোমিওপ্যাথিক ইউনিট চালু করা হয়। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হিসেবে শুরু হওয়া এই ইউনিটে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করেন। রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
এদিকে সচেতন ব্যক্তিরা জানান, অনেক রোগী জানেন না কুমেক হাসপাতালে বিনামূল্যে হোমিও চিকিৎসা হয়। জানলে তারা সেবা নিয়ে উপকৃত হতে পারতেন।
এই বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নাসরিন আক্তার লিপি বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খেয়ে আসছি। আমার মা-ই আমাকে এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। আমার অভিজ্ঞতায়, হোমিও ওষুধ ধীরে হলেও গভীরভাবে কাজ করে এবং রোগ পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ্যালোপ্যাথিক ওষুধে তাৎক্ষণিক উপশম মিললেও অনেক সময় রোগ ফিরে আসে। এছাড়া, হোমিও ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে, যা আমার জন্য বড় সুবিধা।”
হোমিওপ্যাথিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. সাইয়্যেদ মো. অলি উল্লাহ বলেন, “আমরা প্রতিটি রোগীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে পরিপূর্ণভাবে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করি। হোমিওপ্যাথিতে কেবল লক্ষণ নয়, রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমাদের দেওয়া সব ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এবং রোগীর আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা বজায় রাখা হয়।”
কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, “অনেক রোগী আছেন যারা এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ গ্রহণ করতে চান না। তাদের জন্য আমরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এখানে রোগীরা খুবই কম খরচে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।”
উল্লেখ্য-বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর যেমন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানে সরকারি ও বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর-১৪-এ অবস্থিত সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দেশের বৃহত্তম সরকারি হোমিও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম, সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে কার্যকর হওয়ায় হোমিও চিকিৎসা এখনও দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে জনপ্রিয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই চিকিৎসা পদ্ধতির আরও বিস্তৃতি ঘটাতে পারলে সাধারণ মানুষ আরও নিরাপদ ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা সুবিধা লাভ করতে পারবে। কুমেকের এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে।

inside post
আরো পড়ুন