লাল পাহাড়ে অন্যরকম একদিন 

।। মো.মহিউদ্দিন আকাশ ।।
চা বাগান বলতে আমরা সাধারণত সিলেটকে জানি। তবে কুমিল্লা শহর থেকে সামান্য দূরে সদর দক্ষিণ উপজেলার লালপাহাড়ে ঘেরা বড় ধর্মপুরেও যে চা বাগান আছে তা অনেকেরই অজানা।
রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরামের সদস্যরা ভ্রমণপিপাসু হওয়ায় নানান সময়ে হুট করেই বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণে বের হয়ে যাই। তবে ভ্রমণগুলোতে আমরা আমাদের পরিবারকে খুব মিস করি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি ও পাঠকপ্রিয় সাপ্তাহিক আমোদ‘র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় প্রতিবছরই আমরা পরিবার নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করি। এবারে আমরা গেলাম কুমিল্লার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তারিক-উল- ইসলাম মজুমদারের শখের বশে করা চা বাগানে। বনভোজনের পরিকল্পনায় তৈয়বুর রহমান সোহেল, আমি ও মারুফ বলেছিলাম সকাল ৯ টায় যেন সবাই স্পটে থাকে। মোল্লা ভাই বললেন এত সকালে বউ বাচ্চা নিয়ে কি সবাই আসতে পারবে?
তবে তিনি ঠিকই ভাবি আর তার আদুরের কন্যা মুশফিকা, আব্দুল্লাহ এবং বোন ভাগ্নিদের নিয়ে যথাসময়েই পৌছলেন। আবিরকে নিয়ে শীতের খুব সকালে বের হতে ভয় লাগে,যদি ঠান্ডা লেগে যায়। যার ফলে আমি ও জেমি একটু দেরিতেই বের হলাম।
তখন প্রায় ১০ টা বাজে। কুমিল্লা- নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের রতনপুর নেমে বড়ধর্মপুর চা বাগানের উদ্দেশ্য অটোরিকশাতে উঠলাম। এমনি মুহূর্তে ঢাকা টিব্রিউনের মহসীন কবির ভাইয়ের ডাক- লিডাররা দেরি করলে কেমনে হবে?
অটোরিকশা সামনের দিকে যাচ্ছে আর গহিন পাহাড়ের দিকে আমরা এগুচ্ছি। আমার সহধর্মিনী পাহাড়ের শহর চট্টগ্রামে বেড়ে উঠা। একটু টেনশন হচ্ছিল পিকনিক স্পট পছন্দ করে কি না? তবে পথ যত এগুচ্ছে ততই তার চোখেমুখে আনন্দ দেখে ভয় দূর হল।
দুই দিকে পাহাড় আর মাঝখানে সরুপথ ধরে আমরা পৌছলাম তারিক-উল- ইসলাম মজুমদারের মজুমদার ওয়ান ড্রপ স্কুলের সামনে। যা তিনি ও তার জাপানি বন্ধুরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
স্কুলের পাশেই পাহাড়ের পাদদেশে চা বাগান।  গেইটে সাইনবোর্ড “সাপ হতে সাবধান” লেখা। এই এখানে কি সত্যিই সাপ আছে?  আবিরের মায়ের প্রশ্ন!
সাপ আছে কি না জানি না।তবে খানিক সামনে গিয়ে দেখি পাহাড়ের পাদদেশে চমৎকার একটি সবুজ মাঠ। সেখানেই চেয়ার টেবিল পেতে বসে আছেন মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই, ও  দি বিজনেস স্টান্ডার্ড‘র জেলা প্রতিনিধি তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাইয়ের পরিবার।
অবাক করে দিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  সাবেক সহকারি পরিচালক ও ডেপুটি সিভিল সার্জন বিনয়ী মানুষ ডাঃ গোলাম শাহজান ও তার স্ত্রী।  এই শীতের সকালে সবার জন্য পাটিসাপটা পিঠা ও বালুশা জাতীয় মিষ্টান্ন নিয়ে হাজির।  পিঠা দুটির স্বাদ যেন এখনো জিহবায় লেগে আছে। আরো অবাক হলাম এটা জেনে যে,ভাবি গতকাল রাতে নিজেই এ পিঠা বানিয়েছেন।  কারো প্রতি আন্তরিকতা কোন পর্যায়ে থাকলে রাত জেগে এ বয়সে নিজ হাতে পিঠা তৈরি করেন। রাইজিং সদস্যরা ডানে তাকাতে দেখি উঁচু পাহাড়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত এখন টিভির স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ আলম ভাই, ভাবি ও তার একমাত্র কন্যা মুসকান।
এনটিভির মাহফুজ নান্টু ভাই ও তানিয়া ভাবি, তাইয়্যেবা তাক্বওয়ারে নিয়ে সুন্দর সময় কাটালেন।  আমরা পাহাড়ে উঠলাম।  চারদিকে সবুজ আর লাল মাটির পাহাড়। এ যেন লাল সবুজেে পতাকা।
জেমি বলল – তোমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাও অথচ নিজের জেলায় ই কত বড় পাহাড়, কি অপরুপ সৌন্দর্য!  তোমাদের খবর নাই।
যে যার মত পরিবার নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। পাহাড়জুড়ে চা বাগান আর বিভিন্ন গাছ গাছালি। প্রখর রোদে পাহাড় যেন হিমেল হাওয়ার স্বর্গ।
মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের ডাকে সবাই একত্রিত হলাম। শুরু হল আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা।আমাদের শিশুরা উৎসাহ, সাহস আমাদের থেকেই পাবে। এ জন্য তাদের নিয়ে প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার আয়োজন।
মাহফুজ নান্টু ভাইয়ের মেয়ে তাইয়্যেবার ডান্সে শুরু হল শিশুদের আয়োজন। মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের মেয়ে মুশফিকা,ভাগ্নি নিঝুম,মুন,আলো, ছেলে আব্দুল্লাহ,তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাইয়ের ভাগ্নি হৃদি, বোন নিপার অসাধারণ গান, কবিতা আবৃত্তিতে মুগ্ধ সকলে।
এরই মাঝে পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড.মোহাম্মদ আশিকুর রহমান ও তার সহধর্মিনী বিনার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন‘র একমাত্র ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আসায় আমাদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হল। কারণ এ দম্পতি যেমন বড় মাপের মানুষ তেমনি মিশুক।
আশিক ভাই ও ফাহমিনা ভাবি এসেই চকলেট বিতরণ করলেন। এরই মাঝে নারীদের চেয়ার খেলার আয়োজন।  বিচারক আশিক ভাই। প্রতিযোগী ফাহমিনা ভাবি।
খেলার শুরুতেই বাদ পড়লেন সিনিয়র ভাবিরা। যথাক্রমে মোল্লা ভাইয়ের স্ত্রী, ডা.গোলাম শাহজান ভাইয়ের স্ত্রী ও আশিক ভাইয়ের স্ত্রী । এরপরেই বাদ পড়ল নান্টু ভাইয়ের বউ তানিয়া ভাবি ও  আমার বউ জেমি ভাবি!
তবে সর্বশেষ টিকলেন মাসুদ আলমের স্ত্রী, কামরুন্নাহার আপা। আর ১ম হলেন ড.আশিক ও ড.ফাহমিনা দম্পতির একমাত্র কন্যা রাইদা।
এবারে পুরুষদের পালা। তবে এর মাঝে আমাদের আনন্দ বাড়িয়ে দিল কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ডেপুটি কন্ট্রোলার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম  স্যারের আগমন।
পুরুষদের বল নিক্ষেপে সবাই জয়ী হলেও পুরস্কার নিলেন মহিউদ্দিন মোল্লা, মাসুদ আলম,মোহাম্মদ শরীফ ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ।
মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই আছেন এমন কোন ভ্রমণ বা আড্ডায় আমোদ সম্পাদক বাকীন রাব্বী ভাইয়ের স্মৃতিচারণ বা কোন কথা আসবে না এমনটি এ পর্যন্ত ঘটেনি।

খাবার শেষে আসলেন শরীফ খান,তার স্ত্রী মীম ও বোন খাদিজা, নিশাত। গতকাল তার ফুফু মারা যাওয়ায় আসতে দেরি হয়েছে।  তবে সে ২৩ টি দেশকে পিছনে ফেলে দক্ষিণ কুরিয়ার ডোংআ ইউনিভার্সিটির সেরা ছাত্র হওয়ায় রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানায়। পুরস্কার বিতরণ শেষে সবাই  অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রত্যাশা করেছেন এমন আরেকটি আয়োজনের। ড.আশিকুর রহমান ও ড.ফাহমিনা ভাবি ব্যতিক্রম মানুষ। খেলা গান বক্তব্যে দুজনেই সেরা। শহিদ স্যারের হাসি লেগে থাকা মুখসৃত অনুভূতি প্রকাশে আরেকবার এমন আয়োজনে আগ্রহ মেলে।

আমাদের অন্য রকম আনন্দময় এ দিন দেখে সূর্যের সম্ভবত হিংসে হচ্ছিল, তাই সে ডুবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কি আর করা বেলা ফুরাবের সাথে সাথে ফটোসেশান করে আমরা ফিরলাম প্রত্যেকের আবাসস্থলে। আর মনে মগজে লেগে থাকে চা বাগানের মিষ্টি মুহূর্তগুলো।
লেখক:সাধারণ সম্পাদক 
রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম, কুমিল্লা ।