লাল পাহাড়ে বৈসুর বর্ণিল প্রস্তুতি

মহিউদ্দিন মোল্লা।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সালমানপুর এলাকার লালমাই পাহাড়। এলাকায় বসবাসরত ত্রিপুরা সম্প্রদায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা বর্ষবরণের। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে বলা হয় বৈসু। উৎসবে থাকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিশেষ নৃত্য ও গান। এছাড়া পানিতে ফুল ভাসানো, পূজা ও অতিথি আপ্যায়নসহ নানা উৎসব।
সোমবার বিকালে সালমানপুর লালমাই পাহাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,শীতের ঝরাপাতা এখনও ঝরছে। শালবনের ভেতরে শালগাছের পাতা পড়ে মাটিতে পাপোষে রূপ নিয়েছে। সেখানে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণীরা অপেক্ষা করছেন বর্ণিল থামি পোষাক পরে।

তাদের গলা,কপাল আর কোমরে নানা গহনা। অপেক্ষা দল নেতা অর্পণা রানী ত্রিপুরার জন্য। তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতকের ছাত্রী। তিনি আসার পর পাতার উপর মচ মচ শব্দ তুলে শুরু হয় নৃত্য প্রশিক্ষণ। নৃত্যে অংশ নিয়েছেন কোটবাড়ি গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনামিকা রানী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, বৈসু আমাদের অন্যতম উৎসব। সে সময় আমরা নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম উপস্থাপন করি। সেজন্য রিহার্সেল করছি।

সূত্রমতে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড় এলাকার সালমানপুর, জামুড়া,বৈষ্ণবমুড়া,সদরের হাদকপুরে ৯৮টি ত্রিপুরা সম্প্রদায় পরিবার বসবাস করে। সালমানপুর ত্রিপুরা পল্লীর স্কুলে ২৫-৩০ জন শিশু ককবরক ভাষা শেখার সুযোগ পাবে। স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ককবরক ভাষা শেখার বই প্রকাশেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও ককবরক ভাষার কবিকে এই স্কুলের শিক্ষক হিসেবে স্বেচ্ছায় দায়িত্বপালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় ত্রিপুরা কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি সজীব চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, নতুন বর্ষ আসছে। সেজন্য প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এই পাড়ায় এখন খুশির আমেজ বইছে। তাদের মাতৃভাষা ককবরক পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিশুদের মাতৃভাষা শিখানোর উদ্দেশ্য ককবরক ভাষার স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। এই মাসের শেষে বৈসুর আগেই স্কুলটি উদ্বোধন করা হবে। পাহাড়ের অন্য পাড়ার শিক্ষার্থীদের জন্যও মাতৃভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করা হোক।
সদর দক্ষিণ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোষ বলেন, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সালমানপুর, জামুড়া,বৈষ্ণবমুড়া,সদরের হাদকপুরে ত্রিপুরা সম্প্রদায় পরিবার বসবাস করে। কালের বিবর্তনে ত্রিপুরা অধ্যুষিত এই এলাকায় এখন এই সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা ককবরক ভাষা শেখার লিখিত কোন বই এমুহূর্তে নেই। ককবরক ভাষা শেখার বই প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের মাতৃভাষা ককবরক পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।