সংবাদপত্র আমাকে সবসময় টানে

  ।। মতিন সৈকত ।।
১৯৮৫ সাল থেকে মনের বিশেষ কথাগুলো ডাইরিতে লেখা শুরু করি। তখন থেকেই গল্প শুরু। কবিতা বানানোর চেষ্টা করি। বারবার জোড়াতালি দেই। কিন্তু যুৎসই হয়না। বারবার লেখি। বারবার ছিড়ে টুকরো করি। যাকে বলে অধ্যবসায়। আবার লেখি। মন মতন হয়না। আজও কি মন মতন হয়? তারপরও লেখালেখির চেষ্টা।
১৯৮৭ সালে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা পাঠাই। তখন হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকা। কিশোর তরুণদের লেখা ছাপা হওয়া স্বপ্নের মতন। পত্রিকা আমাকে সবসময় টানে। যাকে বলে পত্রিকা প্রেম। পত্রিকা লেখা ছাপা হওয়া বড় কথা নয়। বড়দের তাজা লেখা পড়তে পারার আনন্দ-ই আলাদা।
বিশেষ দিনের ক্রোড়পত্র, সাহিত্য পাতার জন্য বাড়ি থেকে ১৬/১৭ কিলোমিটার দূরে দাউদকান্দি ফেরিঘাটে চলে যেতাম। বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য সম্ভার সংগ্রহ করতাম। পত্রিকা হকারকে গুরুত্ব দিতাম। সম্পর্ক রক্ষা করে আজও চলি। পত্রিকার লোককে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করি। সাংবাদিক আমার পরম বন্ধুু। তাদের সখ্যতা সাহচর্য্য উদ্দীপ্ত করে। সৃজনশীলতা অনুপ্রাণিত করে।
নিজের লেখা ছাপা হলে মন আনন্দে নেচে উঠে। পত্রিকা থেকে প্রেরণা খুঁজে পাই। নানা তথ্য উপাত্ত উদ্ভাবনা চিন্তা শক্তি মন জাগ্রত করে। নিজেকে বৈশ্বিক ভাবনার সাথে মিলাতে শিখেছি। জাতীয় আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পত্রিকা থেকে দূরে থাকলে অনেক পিছিয়ে যেতে হয়।
কৈশোর থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছে চিঠি লেখা শুরু করি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান এবং বরেণ্য ব্যাক্তিদের কাছে চিঠি লেখি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ডাকযোগ একটি কবিতা পাঠাই। আমার সৌভাগ্য তিনি কবিতা পড়ে রাষ্ট্রীয় প্যাডে আমাকে অভিনন্দন জানান। তাঁর লেখা চিঠি পেয়ে সত্যিই আমি আনন্দিত, পুলকিত, উজ্জীবিত হই। তাঁর লেখা চিঠিসহ আমি পাঁচবার রাষ্ট্রীয় সন্মাননা পাই। দুইবার জাতীয় কৃষি পদক, একবার জাতীয় পরিবেশ পদক। একবার এগ্রিকালচারাল ইম্পরট্যান্ট পারসন এআইপি। তারপরও রাষ্ট্রপতির চিঠি কে আমি সেরা মনে করি। কারণ এ চিঠি আমাকে মানসিকভাবে শক্তি যুগিয়েছে। আমার রাষ্ট্রীয় সন্মাননা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সাংবাদিক বন্ধুদের অবদান স্বরণীয়। তারা আমার কাজকর্ম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করছেন।
রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন পত্রটিসহ ১২ টি কবিতা নিয়ে নিজেই কবিতা পত্র প্রকাশ করি। সে কি আনন্দ। কবিতা লেখি, কবিতা পড়ি। সবসময় বই হাতে নিয়ে পড়ি, ঘুরি। পাঠ্য বই প্রচুর পড়েছি। অন্য বইও। আবৃত্তি, উপস্থাপনা মনের উদাসীনতা, অস্থিরতা দুর করে প্রশান্তি আনে।
১৯৮৯ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় আরজিনা রহমান আমাকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ‘সৈকত লেখা ছাপাতে পারছেনা’। সে প্রতিবেদনে তিনি আমার লেখালেখি কে মূল্য্যায়ন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন। ‘সৈকত তার কবিতার মতই বাঙময় অথচ বেদনাবিধুর’। এটি আমাকে নিয়ে লেখা সে সময়ে একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন। ১৯৮৯ সালে ৩৩টি কবিতা নিয়ে ‘অলংকার’ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ করি। পরবর্তীতে মুক্তি চাই, তোমারতো সুখেই আছো দুটি গল্প গ্রন্থ প্রকাশ করি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে অর্ধশতাধিক গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ছোটদের জন্য লেখা দুটো ক্ষুদে উপন্যাস ‘চোখ’ও ‘আম্মা’ দৈনিক মিল্লাত এবং দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকশিত হয়। সে সময়ে পত্রিকায় তারুণ্যের মহামূল্যবান সময় কাটিয়েছি।
আমার বাবা পত্রিকা পড়তে ভীষণ ভালবাসতেন। কয়েক মাইল হেটে গিয়ে পত্রিকা পড়তেন। বইয়ের সাথে ছিল নিবিড় সম্পর্ক। আমার বড় ভাই ছিলেন অধ্যক্ষ। তিনি বইয়ের জগতে পত্রিকার ভুবনে ডুবে থাকতেন। তার লিখিত প্রকাশিত বই আছে। তাদের পাঠ অভ্যাস আমাকে প্রভাবিত করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি। সে সময় পত্রিকা অফিস বিশ্বিবদ্যালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গকে কাছ থেকে দেখেছি। রাজধানী বিভিন্ন পাবলিক লাইব্রেরিগুলো চষে বেড়িয়েছি। রাত যত বাড়ে আড়ৎদারি তত জমে। পত্রিকার অফিসগুলো দিনের বেলা ছুটির ঘন্টার মত নিরিবিলি। সন্ধ্যা হলেই কাজের গতি বাড়ে। পত্রিকা অফিসের কাজ শেষ করে রাস্তায় বেরুলে সুনসান ঘুমন্ত শহর।
কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমোদ মহিরুহ হিসেবে আজও সম্মান এবং গৌরবের সঙ্গে স্বগর্বে সুভাস বিলায়। ৭১ বছরের পত্রিকাটি বার্ধক্য স্পর্শ করেনি। আজও ‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়- তোরা সবে জয়ধ্বনি কর’।

inside post

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন এআইপি, জাতীয় পরিবেশ পদক এবং দুইবার কৃষি পদক প্রাপ্ত।

আরো পড়ুন