সদর দক্ষিণে গ্রামের মাটির ভবনে শিক্ষা জাদুঘর

 

মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
রামধনপুর। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। গ্রামের স্কুলে রয়েছে অর্ধশতবর্ষী মাটির স্কুল ভবন। সেই ভবনে বুধবার বিকালে চালু হয়েছে শিক্ষা জাদুঘর। এটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ। স্থানীয়দের দাবি এটি দেশের প্রথম শিক্ষা জাদুঘর। উদ্বোধনের দিনে জাদুঘরে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের ভিড় দেখা গেছে।

 

সূত্রমতে, ১৯৭১ সালে রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় বাঁশের বেড়া ও ছনের ছাউনির একটি ভবন দিয়ে। ১৯৭৩ সালে মাটির স্কুল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সে থেকে ১৯৯৪ সালে পাকা ভবন নির্মাণ করার পূর্ব পর্যন্ত পাঠদান হতো এ মাটির ভবনটিতে। এখানে যারা জ্ঞান অর্জন করেছেন তাদের অনেকেই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তাদের অনেকেরই নাতি-নাতনি এখন স্কুলে পড়াশোনা করছে। তবে পাকা ভবনে। এখন স্কুলে ৩টি নতুন ভবন হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন গেইট আছে। এদিকে পরিত্যক্ত মাটির ভবনটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেটিকে জাদুঘরে রূপ দেয়া হয়েছে। সেই জাদুঘরে উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এখানে শিক্ষার নানা উপকরণ দিয়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের সামনে ডানা মেলে দাঁড়িয়ে আছে বটবৃক্ষ। পাকা ভবনের সাথের ঝরাজীর্ণ মাটির ভবনের গায়ে যৌবনের ছোঁয়া। মাটির নতুন প্রলেপ। নানা রঙের আল্পনা। ভেতরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক দশক আগের শিক্ষা উপকরণ। প্রদর্শন করা হয়েছে বই, কলম, দোয়াত, ট্রাংক,কুপি, হারিকেন,চিমনি, ঘড়ি, আলমিরা,মগ, পিতলের গ্লাস, পাখা, চেরাগদানি, হ্যাজাক লাইটসহ বিভিন্ন উপকরণ।

রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, আমিও এই স্কুলের ছাত্র। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষা জাদুঘর হয়েছে এতে এলাকাবাসী আনন্দিত।

জাদুঘরের উদ্যোক্তা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনামতে উপজেলার পিছিয়ে পড়া স্কুল খুঁজতে গিয়ে রামধনপুর আসা। এমুহূর্তে দেশে এরকম কয়টি মাটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন অক্ষত আছে জানি না। প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের সমন্বয়ে ৫ সদস্যের সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। সবার সহযোগিতায় এটি সংস্কার করা হয়। সম্ভবত এটি দেশের প্রথম শিক্ষা জাদুঘর। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই জাদুঘর আমাদের শেকড়ের গল্প শোনাবে নতুন প্রজন্মকে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, পল্লী গ্রামে মাটির ঘর সংরক্ষণ করে শিক্ষা জাদুঘর একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এটি নতুন প্রজন্মকে আগের শিক্ষা উপকরণ সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা করবে। সাথে বড়রা তাদের ফেলে আসা স্মৃতিতে ফিরে যেতে পারবেন।