সরাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে পাঁচ মাসেও পৌঁছেনি বিদ্যুৎ
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাসেও পাননি বিদ্যুৎ! অতিশয় মানবেতর জীব যাপন করছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের শতাধিক পরিবার।প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার স্থাপন করে দেয়ার লিখিত নির্দেশনার পরও এব্যাপারে স্থানীয় পিডিবি নীরব থাকায় সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আর বিদ্যুৎহীনতায় নানাবিধ সমস্যায় ধুকছেন ঘরপ্রাপ্ত গরীব মানুষেরা। এহেন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন এলাকার।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দেয়া হয়েছে জায়গাসহ ঘর। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় দুই দফায় ১৩৩ পরিবার ঘর পেয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ মাসেও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি ওই শতাধিক পরিবারে।
জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হচ্ছে ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প।’ গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রী দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে নির্মিত মোট ১০২ টি ঘর উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে চুন্টা ইউনিয়নে ৪৬টি, শাহজাদাপুরে ২২টি, কালিকচ্ছ ইউনিয়নে ১৫টি, নোয়াগাঁও ইউনিয়নে ১২টি এবং পানিশ্বর ইউনিয়নে ১২টি। হস্তান্তরের সময় ওই ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলোনা। এমনকি ছিলোনা সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনাও। তাই চাবি গ্রহণ করলেও অনেকেই বিলম্বে তাদের প্রাপ্ত ঘরে ওঠেন। এরপর গত ২০ জুন দ্বিতীয় ধাপে এই উপজেলায় আরও ৩১টি নির্মিত ঘর উপকারভোগীর নিকট হস্তান্তর করা হয়। এই ধাপে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নে ১১টি, শাহজাদাপুর ইউনিয়নে আটটি, পানিশ্বর ইউনিয়নে সাতটি এবং এবং চুন্টা ইউনিয়নে পাঁচটি ঘর উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। দুই ধাপে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ১৩৩টি পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, প্রকল্পের নিয়মানুসারে অসহায় পরিবারগুলোর গৃহে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান ও মিটার স্থাপনের কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি সুপেয় পানি পাওয়ার ব্যবস্থা করারও কথা রয়েছে। কিন্তু পাঁচ মাসের অধিক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, উপরোক্ত দুইটির কোনো সমস্যারই হয়নি সমাধান। গত ২ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর প্রধানকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের গৃহে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়। একই পত্র প্রকল্পের জেলা ও উপজেলায় সংশ্লিষ্টদের কাছেও প্রেরণ করা হয়। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওই পত্রটির রেফারেন্স দিয়ে (কপি সংযুক্ত করে) সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওইসব গৃহে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে (বিক্রয় ও বিতরণ) লিখিতভাবে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি অনুরোধ করা হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকেও। কিন্তু পত্র প্রেরণের দীর্ঘ ৩৮ দিন পরও এ ব্যাপারে কিছুই করেনি সরাইল পিডিবি কর্তৃপক্ষ। ফলে এই নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দ্বীন ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন এলাকায় দুই ধাপে ঘর প্রাপ্ত ১৪টি পরিবারের কেউই এখনো পায়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে বেশ কয়েকটি ঘরে লাইন টেনে রেখেছেন।’ পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামে অবস্থিত প্রকল্পের ৪৯ নম্বর ঘরের বাসিন্ধা নূরূদা বেগম (৪৩) বলেন, ‘ঘরে ওঠেছি পাঁচ মাস হয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যায় কষ্টে আছি। বাধ্য হয়ে পাশের বাড়ি থেকে লাইন এনেছি। মাসে ২শ’ টাকা করে দিতে হয়।’ একই গ্রামে অবস্থিত প্রকল্পের ৫২ নম্বর ঘরের বাসিন্দা জামাল মিয়া (৩৬) বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাঁচ মাস ধরেই কষ্টে আছি।’ শাহজাদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ২২ পরিবারের কাউকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়নি পিডিবি। প্রচণ্ড গরমে খুবই কষ্টে আছেন লোকজন।’ শাহজাদাপুর গ্রামে অবস্থিত প্রকল্পের ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা আব্দুল খালেক (৬৫) ও ৭৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা দুলাল মিয়া (৫০) বলেন, ‘চার মাস ধরে বিদ্যুৎ সমস্যায় রোগী হয়ে যাচ্ছি। এতো গরমে কী বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা যায়?’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের লিখিত নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা সরাইল পিডিবি ও সুহিলপুরের পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবেই জানিয়েছি। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কিছু জায়গায় কাজ করলেও সরাইল পিডিবি’র কাছ থেকে পজেটিভ কিছুই পাচ্ছি না।’ সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামির আসাব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে চিফ স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। নোট দিয়েছি, প্রসেসিং চলছে।’