সরাইলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত

 পরিবারের দাবি পুলিশের গুলিতে নিহত ফয়সাল
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে তৃতীয় পক্ষের যুবক ফয়সাল নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ,সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। নিহতের পরিবারের দাবি, ফয়সাল পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, দু’পক্ষের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ হলে স্প্রিন্টারের আঘাতে ফয়সাল মারা যায়।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার কালিকচ্ছ বাজার এলাকায় স্থানীয় সূর্যকান্দি ও ধরন্তী মূলবর্গ গ্রামের লোকজনদের মধ্যে ঘটে এই সংঘর্ষের ঘটনা। নিহত ফয়সাল মিয়া (২২) উপজেলার কুট্টাপড়া গ্রামের রাকিব মিয়ার ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি ফয়সাল কালীকচ্ছ বাজারে তার মামা ওসমান হারুনীর রড-সিমেন্টের দোকানে কাজ করতেন।
নিহতের পরিবার, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ বাজারে সূর্যকান্দি গ্রামের ইকবাল চৌকিদারের ছেলে অটোরিকশাচালক আকাশ রাস্তা পার হওয়ার সময় ধরন্তী মূলবর্গ গ্রামের হুমায়ুন মেম্বারের ছেলে তোফাজ্জলের মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগে। এনিয়ে তাদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি হয়। এই ঘটনার জেরে শুক্রবার দুপুরে তোফাজ্জলের লোকজনেরা কালিকচ্ছ বাজারে আকাশের উপর আবারো হামলা চালায়। এতে আকাশ গুরুতর আহত হন। এই খবর এলাকায় চাউর হলে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতারের পর কালিকচ্ছ বাজারে সূর্যকান্দি গ্রামের ইকবাল চৌকিদারের গোষ্ঠী ও ধরন্তী মূলবর্গ গ্রামের দুলালের গোষ্ঠীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় বাজারের কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।  সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশত গ্রামবাসী আহত হন। গুরুতর আহতাবস্থায় ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় অন্তত দশটি ককটেল উদ্ধারসহ ৪/৫ জনকে আটক করে। সংঘর্ষ থামাতে অন্তত ৫০-৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, সংঘর্ষের সময় আতঙ্কিত হয়ে দোকান বন্ধ করার সময় পুলিশ অতর্কিতভাবে নিরপরাধ ফয়সালকে গুলি করে। এতেই সে নিহত হয়। নিহত ফয়সালের মা হালিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি তার মামার দোকানে কাজ করতো। পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে মারা গেছে।’ ফয়সালের মামা ওসমান হারুনী বলেন, ‘ফয়সালের বাড়ি কুট্রাপাড়ায় হলেও আমাদের দোকানে থাকতেন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর ঝগড়া শুরু হলে আমরা দোকানে তালা লাগাচ্ছিলাম। এ সময় পুলিশ এসে আমার ভাগ্নের উপর গুলি করে। তাকে গুলি করা হলো কেন? আমরা তো ঝগড়ার সাথে জড়িতও না? আমরা এর বিচার চাই।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন  জানান, মোটরসাইকেলে চড়া নিয়ে দুই যুবকের মধ্যে বাকবিতণ্ডার জেরে উভয় গ্রামের লোকজন রাতে কালিকচ্ছ বাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষকারীরা সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটায়। ককটেলের স্প্রিন্টারের আঘাতে যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত বেশ কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করাসহ ৪/৫ জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে ৫০-৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তী সংর্ঘষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মরদেহের ময়না তদন্তের পর তার মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।’

(ছবি-প্রতিকী)