সহায়তার অর্থ আনতে গিয়ে হাতের আঙুল খোয়ালেন গৃহবধূ রিনা

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
এক সন্তানের জননী রিনা বেগম। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অন্তত ছ’মাস আগে। একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে থাকেন ভাইয়ের বাড়িতে। কায়ক্লেশে চলে সম্বলহীনা রিনার জীবন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তার সাড়ে চারশ’ টাকা আনতে গিয়ে এবার নিজের হাতের আঙ্গুল খোয়ালেন গৃহবধূ রিনা বেগম। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা এলাকার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাত থেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ রিনা বেগম (৩৫)।এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষের দরজার চিপায় পড়ে রিনা বেগমের ডান হাতের একটি আঙুল কেটে নিচে পড়ে যায়। অবশ্য ইউনিয়ন পরিষদ নিয়েছে রিনার চিকিৎসার দায়িত্ব।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিনার ছোট ভাবী মরজিনা জানান, গত ছয় থেকে সাত মাস আগে রিনার সঙ্গে তার স্বামী ফজল মিয়ার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে রিনা তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করে। রিনার বাবা মারা যাওয়ার পর তার ভাই জসিম মিয়া সংসারের হাল ধরেন। রিনা ও তার মেয়ের ভরণপোষণও ভাই জসিমই করে আসছেন।
অসহায় ও হত-দরিদ্রদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তার ৪৫০ টাকা আনতে বৃহস্পতিবার দুপুরে হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান রিনা বেগম। টাকা নিতে লাইনে দাঁড়ালে রিনাকে পেছন থেকে কয়েকজন ধাক্কা দিলে রিনা ইউনিয়ন পরিষদের দরজায় গিয়ে ধাক্কা লাগে। এসময় তার ডান হাত দরজার ফাঁকে আটকে যায়। তখন দরজায় থাকা চৌকিদার মনে করেন রিনা জোর করে ভেতরে ঢুকে পড়ছেন। এ সময় চৌকিদার রিনার হাত আটকে থাকা অবস্থাতেই দরজা বন্ধ করে দেন। এতে রিনার হাতের একটি আঙুল পুরোপুরি কেটে নিচে পড়ে যায় এবং আরেকটি আংশিক কাঁটা পড়ে। আহত রিনা বলেন, ‘আমি চৌকিদারকে অনেক মিনতি করে বলেছি- ভাই আমার হাত আটকে গেছে, দরজাটা খোলেন। কিন্তু তিনি আমার কোন কথাই শোনেননি। পরে চৌকিদার আমার কাঁটা আঙুল ঢিল মেরে ছুড়ে ফেলে দেন।’
স্থানীয় হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সারওয়ার রহমান বলেন, টাকা বিতরণের সময় আমি ছিলাম না। শুনেছি কার আগে কে টাকা নেবে, এ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তখন চৌকিদার দরজা লাগাতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। দরজায় যে ওই নারীর হাত আটকে ছিল, সেটি চৌকিদার দেখেননি। মহিলাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু এটা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা তাই মহিলার যাবতীয় চিকিৎসার খরচ ইউনিয়ন পরিষদ বহন করবে।