সাতদিন পর মায়ের কোলে ফিরছে চার মেয়ে

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় একসঙ্গে চার বোন নিখোঁজের সাত দিন পরেও তাদের হদিস পাওয়া যায়নি। এক সঙ্গে চার মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা-মায়ের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। আর পুরো ইউনিয়ন জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। অভিভাবকরা তাদের অপহরণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাদের উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে পুলিশ বলছে চেষ্টায় ত্রুটি নেই।

অপহরণের আশঙ্কা করে নাঙ্গলকোটের মৌকরা ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে তারা অপহরণের শিকার হয়েছেন। যদি তারা পালিয়ে যেতো তাহলে এতদিন কারা কীভাবে চলছে? তারা কী খাচ্ছে? তাদের কে রাখবে? সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তারা কোথাও নেই। প্রশাসন কেন তাদের এখনও খুঁজে বের করতে পারেনি? তারা যেখানেই থাকুক পুলিশ তৎপর থাকলে ঠিকই বের পারতো। তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের আরও তৎপরতা বাড়ানো উচিত।’

স্থানীয় শতবর্ষী মহুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাজাহান বলেন, ‘এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। তবে ধারণা করছি, তাদের অপহরণ করা হয়েছে। যদি তারা পালিয়ে থাকতো, নিশ্চিত চলে আসতো। কারণ ছোট মেয়েটা এখনও ভালোভাবে কথাও বলতে পারে না। তাদের উদ্ধার করতে আমরা পুলিশের আরও তৎপরতা চাই।’

এদিকে, শিক্ষকরাও বলছেন এই চার বোন পালিয়ে যায়নি। নাঙ্গলকোট আফসারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হান্নান বলেন, ‘তারা তিন বোন আমার মাদ্রাসায় পড়তো। তাদের মধ্যে তাসনিম জাহান (১৭) আলিম প্রথম বর্ষ, মারজাহান (১৪) অষ্টম ও তাজিন সুলতানা (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। যেদিন থেকে তারা নিখোঁজ সেদিন তারা মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিল না। তারা অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে কিছুটা চুপচাপ স্বভাবের ছিল। তাদের আচরণ অত্যন্ত ভদ্র ছিল। পালিয়ে যাওয়ার কোনও লক্ষণ ছিল না। তারা মেধাবীও ছিল। বাবা দরিদ্র হওয়ায় আমরা তিন জনের দুজনকে ফ্রি পড়াতাম। ১৯৪২ সালে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর এমন ঘটনা ঘটেনি।’

নিখোঁজ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজাহানের শ্রেণিশিক্ষক সেলিম জাহাঙ্গির বলেন, ‘তাদের পালিয়ে যাওয়ার কথা নয়। কারণ আমি তাদের বহুদিন ধরে দেখে আসছি। তারা অত্যন্ত ভদ্র মেয়ে। সবাই তাদের স্নেহ করতো। আমার ধারণা, প্রশাসন আরেকটু নজরদারি বাড়ালেই তাদের পাওয়া সম্ভব।’

নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজের পর থেকে পিবিআইসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের খুঁজতে কাজ করছে। তাদের কাছে কোনও মোবাইল বা ডিভাইসও নেই। আমরা চেষ্টায় ত্রুটি রাখছি না। একাধিক টিম পুরো দেশে কাজ করছে।’

ওই মেয়েদের বাবা মজিবুল হক বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে মাইশা সুলতানা (৬) নারুয়া তা’লিমুল কোরআন মডেল মাদরাসার শিশুশ্রেণির ছাত্রী। সে আমাকে ছাড়া খাবারও খায় না। এতদিন আমাদের ছেড়ে কী করে থাকবে? আমার মেয়েরা যেখানেই থাকুক আমার খুবই ভয় লাগতেছে। আমার মেয়েরা ভালো নেই। তারা সাত দিন ধরে ঘরের বাইরে থাকার মতো না। আমার মেয়েদের উদ্ধার করে দিন– সবার কাছে আমার দাবি।’

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে মা-বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেয় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের চার বোন। পরে রাগ ভাঙাতে এসে নাতনিদের সঙ্গে করে নিয়ে যান তাদের নানি। পরদিন ২৬ মে সেই বাড়ি থেকে মাদ্রাসার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ রয়েছে তারা। নিখোঁজ চার বোন উপজেলার মৌকরা ইউনিয়নের কালেম গ্রামের মজিবুল হকের মেয়ে। তারা স্থানীয় দুটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আত্মীয়-স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবীদের বাড়িতে খোঁজ করেও মেলেনি সন্ধান। এ ঘটনায় ২৭ মে রাতে নাঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তাদের বাবা মুজিবুল হক। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।