সাপ্তাহিক আমোদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ

।। মোতাহার হোসেন মাহবুব ।।

সাপ্তাহিক আমোদ ঘিরে লিখতে বললে এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি বরাবরই যা জানি তা লিখতে বা বলতে চেষ্টা করি। যা জানি না তা নিয়ে লিখতে গেলে সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তা উপস্থাপনের চেষ্টা করি। সঠিক তথ্য না পেলে লিখা থেকে বিরত থাকি। একইভাবে একই লেখা পুনরায় লিখতে অস্বত্ত্বি বোধ করি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয়ও ঘটে। যেমন পরিচিত কোনো ব্যক্তিত্বকে বারবার শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছে করে, বিশেষ করে ব্যক্তিক দিক থেকে যারা আমাকে একজন সাংবাদিক একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছেন। সহমর্মিতা জানিয়েছেন। দোয়া-আশীর্বাদ করেছেন। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। লেখালেখি ও সাংবাদিকতার দীর্ঘ এ পথ-পরিক্রমায় কাঁটা ছড়িয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম হলেও আঘাতগুলো ছিল গুরুতর। এ সংকট আজো কাটেনি। বাবা বলেছিলেন, তোমাকে বিনয়ী হতে হবে। ধৈর্য্য ধরে সকল বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করতে হবে। বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় বৈকি। বাবাই প্রথম সাপ্তাহিক আমোদ সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। এটি ১৯৭৭ সালের কোনো একদিন কুমিল্লা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত স্টেডিয়াম)। আমি তখন ভিক্টোরিয়া কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তবে সাপ্তাহিক আমোদ এর সাথে পরিচয় ছিল ১৯৬৮ কী ১৯৬৯ সাল থেকেই। এ পত্রিকায় খেলাধুলার সংবাদ প্রাধান্য পেলেও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো বাদ যেতো না। দেশে তখন আইউব বিরোধী আন্দোলন, পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলন তুঙ্গে। আরেকটি বিষয় ছিল সিনেমার বিজ্ঞাপন থাকতো। সিনেমা দেখা তখন নেশায় পরিণত হয়েছিল। খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল শুধু প্রিয় খেলাই নয় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ফুটবলার হিসেবে ফুটবল খেলেছি। বড়দৈল খেলার মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে তো রীতিমত প্রেমেই পড়ে গেলাম। সেই প্রেম আজো বিচ্ছিন্ন হয় নি। ওটা ব্যক্তিক জীবনের গল্প। ওদিকে যাবো না।

দুই.
সত্যি বলতে কী আমার লেখালেখি এমন কী ব্যক্তিক জীবনের সাথে সাপ্তাহিক আমোদ এমনভাবে মিশে আছে- একটি থেকে আরেকটিকে আলাদা করার জো নেই। আমার প্রথম কবিতা ছাপা হয় আমোদ-এ। এরপর ছোট গল্প, প্রবন্ধ ও নিবন্ধন। সে তুলনায় সংবাদ ছাপা হয়েছে কম। মাঝে মাঝে বলি, সাংবাদিকতার হাতে খড়ি সাপ্তাহিক অভিবাদন-এ। অগ্রজ প্রতীম সম্পাদক আবুল হাসানাত বাবুলের মাধ্যমে। এরপর দৈনিক শিরোনাম ও দৈনিক কুমিল্লার কাগজে। সংগঠনের ও খেলাধুলার খবর সাপ্তাহিক আমোদ-এ প্রকাশিত হলেও ছাপা হয়েছে ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ হিসেবে। দৈনিক শিরোনাম ও কুমিল্লায় কাগজে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ নিজ নামে ছাপা হলেও কুমিল্লার কাগজ-এ প্রায়শ আমার লেখা সংবাদ অন্যের নামে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে সম্পাদককে কোনদিন প্রশ্ন করিনি। মনে আছে, নূরপুর নবজাগরণ সংঘের একটি খেলার খবর নিয়ে প্রথম যখন সাপ্তাহিক আমোদ কার্যালয়ে আসি তখন সরাসরি স্বয়ং সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর সাক্ষাৎ মিলে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, তুমি মনির ভাইয়ের ছেলে? আস্তে জবাব দিই- জ্বী। তিনি আামার লেখাটি পড়লেন। বললেন, আরও ‘ডিটেলস’ লিখতে হবে। কীভাবে লিখতে হবে তাও বলে দিলেন। এটি ১৯৭৭-এর কোনো একদিনের ঘটনা। এরপর এ পত্রিকায় লেখালেখি করতে গিয়ে কতভাবে যে পরামর্শ পেয়েছি তা বলতে গেলে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন। ক্রমে পরিচিত হতে থাকি এ পত্রিকায় তথা আমোদ পরিবারের সকলের সাথে। মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীকে ‘খালু’ ও বেগম সামসুন নাহারকে ‘খালাম্মা’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করি। বাবুল ভাইয়ের সাথে আমোদ কার্যালয়েই প্রথম পরিচয়। এরপর নীতিশ সাহা, আবু হাসান শাহরিয়ার, মমিনুল হক, সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, হাসানুল আলমসহ আরো অনেকের সাথে। মনজুর হোসেন আমার জেঠাত ভাই। তার সম্পাদিত ‘সুহৃদ’ সংকলনেই আমার প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। মনজুরও আমোদ কার্যালয়ে প্রায়শ আসতো। নীতিশ সাহার সম্পাদনায় বের হতো ‘কলকাকলীর পাতা’। এ পাতায় ছোট গল্প ও কবিতা লিখেছি। লিখার আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে।

তিন.
১৯৮০ সালের ১০ অক্টোবর গঠন করি বিনয় সাহিত্য সংসদ। সম্প্রতি এ সংগঠন জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সংগঠন হিসেবে ভূষিত হয়েছে। এ সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক আমোদ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ও সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর মৃত্যু-উত্তর কালে গঠিত হয় মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী সংসদ। এ সংগঠনে দুবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। মোহম্মদ ফজলে রাব্বী ও বেগম সামসুন নাহারকে ঘিরে আমার একাধিক লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আসলে কর্মই মানুষের প্রধান পরিচয়। তাঁরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য ইতিবাচক কাজ করেছেন বলেই মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। সাপ্তাহিক আমোদ তাঁদের ইতিবাচক কর্মের ফসল। এ ফসলও টিকে থাকবে মানুষের অন্তরে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এ প্রত্যাশা করি। সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোল্লা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যেভাবে এর হাল ধরেছেন, যা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও গবেষক।