সেই সহিদকে অটোরিকশা উপহার দিলেন শফিউদ্দিন শামীম

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা।।

সহিদ মিয়া! কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে পায়ে চাপা রিকশা চালিয়ে সাতজনের সংসারের চাকা টেনে হিচড়ে সামনে নিচ্ছেন। পরিবারের একমাত্র আয়ের মানুষ হওয়াতে তার কাঁধেই সব দায়িত্ব। ছেলে মেয়ের অসুস্থতা থেকে শুরু করে ভরণপোষণ সবই। তবে তিনি খুব ভালো নেই। মোটরচালিত রিকশার যুগে এখন আর প্যাডেলে চাপা রিকশায় কেউ উঠে না। সবাই শুধু উঠে মোটরের রিকশায়। তার দুর্দশার খবর সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় প্রকাশ হলে জানতে পারেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। পরে তার রিকশার ব্যবস্থা করে দেন তিনি।

ওই আওয়ামী লীগ নেতা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম।

দুঃখ বলতে বলতে কেঁদে উঠা সহিদ মিয়ার চোখে মুখে রিকশা পাওয়ার পর দেখা গেছে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। সরেজমিনে জানা গেছে, ওই আওয়ামী লীগ নেতা শুধু সহিদ মিয়া নন ওই ইউনিয়ন আরও ৫৩ টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

জানা গেছে, শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে বরুড়ার লক্ষীপুর ইইউনিয়নের খেলার মাঠে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ. জেড. এম. শফিউদ্দিন (শামীমের) অর্থায়নে ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের নয়জন কর্মহীন অসহায় পুরুষকে একটি করে অটোরিকশা, নয়জন অসহায় নারীকে একটি করে সেলাই মেশিন, ১০ জন অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা সহায়তা, নয়জন সন্তান সম্ভবা দুস্থ নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতা, ১৮ জন ত্যাগী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাকে সম্মাননা ও উপহার, সাতটি মসজিদ, তিনটি মন্দির এবং একটি এতিমখানায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: আবু সাঈদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ. জেড. এম. শফিউদ্দিন (শামীম)।

রিকশা পেয়ে উচ্ছ্বসিত সহিদ মিয়া বলেন, আমি জীবনে এত কবুশি আর হইনি। জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে আর আয়ও কমছে। পুরাপুরি দিশেহারা অবস্থা হয়ে গেছিল আমার। মেয়ে গুলো পড়াশোনা করে। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। শেষমেশ শফিউদ্দিন শামীম ভাই আমাকে একটা মোটরের রিকশা উপহার দিয়েছে। এখন আর টেনশন নাই। আমার মতো আরও ৮জনকে রিকশা দিয়েছেন তিনি। আল্লাহ উনার ভালো করুক।

প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম থেকে শহরে সমানতালে লেগেছে। এরপরেও গ্রামের কিছু মানুষ এখনও বিভিন্ন কারণে কষ্টে আছে। তাদের খুঁজে খুঁজে এক এক করে আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টা করছি। সহিদ মিয়ার জীবনের গল্প শুনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এরকম প্রতি ওয়ার্ডের একজন করে দিয়েছি। সামনে আরও কিছু করার পরিকল্পনা আছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এনে দিয়েছেন। তিনি যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ রচনা করে দিয়েছেন। তার শাসনামলে দেশের সর্বত্র অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল ও সারাবিশ্বের বিস্ময়। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাথাপিছু আয়, নাগরিক সেবা ও নানামুখি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে বদলে গেছে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান। রূপপুর ২,০০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের ৩২ তম সদস্য রাস্ট্রের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে আজ বাংলাদেশ। আমরা বিদ্যুতে সয়ংসম্পুর্নতা আর্জন করেছি, কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গত সপ্তাহে চালু হলো সকল ধরনের আন্তর্জাতিক সুবিধাসম্পন্ন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল এবং পদ্মা রেল সেতু দিয়ে রেল চলাচল। আমাদের গড় আয়ূ বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর, এটার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি খাদ্য এবং চিকিৎসায় উন্নয়ন হয়েছে বলেই আমাদের গড় আয়ূ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ইউনিয়নের জনগণের নিকট নৌকা মার্কায় ভোট চান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার এডমিরাল আবু তাহের, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও বরুড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বরুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ বাহাদুরুজ্জামান, ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মুফতি মো. শহীদ উল্লাহ, বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আবদুল মান্নান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক প্রমুখ।

উল্লেখ, গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামে রিকশা চালান সহিদ। পাঁচ মেয়ের পরিবারের একজনকে বিয়ে দিলেও বাকি চারজন পড়াশোনায়।

সহিদ মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সহিদ নলুয়া চাঁদপুর এলাকায় রিকশা চালান। নলুয়া চাঁদপুর থেকে সব রুটেই চলে অটোরিকশা। তাই পায়ে চাপা রিকশার যাত্রী নেই। তাই আয়ও নামে মাত্র। পাঁচ মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে একজনকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন আরও দুই মেয়ে উপযুক্ত। কিন্তু অর্থাভাবে ও আয়ের উৎস না থাকায় তিনি আর পারছিলেন না। স্বপ্ন ছিল অনেক বড় ছিল। মেয়েরা পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হবে। তারা নিজেরা নিজেদের ওপর নির্ভরশীল হবে। তারা তাদের ছেলে মেয়েদের নিজেদের মতো করে মানুষ করবে। অথচ আমার মনে হয় আমি অল্পতেই আটকে যাবো। এমন অবস্থার খবর পেলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। পরে সহিদ মিয়ার খবর নিয়ে তাকে একটি অটোরিকশা উপহার দেন।

উল্লেখ, এই আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলার সকল ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে রিকশা বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, আর্থিক অনুদান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা ও গরীব অসহয়ায় ও গর্ভবতী নারীদের মাতৃকালীন সহযোগিতা করে আসছিলেন।