সৌরভ ছড়ানো প্রতিষ্ঠানের গল্প

মহিউদ্দিন মোল্লা

কুমিল্লা শহরতলীর পালপাড়া। পাশে বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজার। বাজারের সাথে গোবিন্দপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় সোনার বাংলা কলেজ। গ্রামের আট দশটি প্রতিষ্ঠানের মতোই এর সাধারণ অবকাঠামো। তবে প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই প্রতিষ্ঠানটি বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করে। গুণগত শিক্ষার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে দেশ জুড়ে। প্রথম বছর শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী চেয়েছেন। অভিভাবকরা নাক কুচকে না করে দিয়েছেন। সবার লক্ষ্য কুমিল্লা নগরীর ভিক্টোরিয়া বা ইস্পাহানি। এখন দেশের ৫৫ জেলার শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসে। আসে কুমিল্লা নগরী থেকেও। সাড়ে চারশ’ আসনে ভর্তির জন্য গতবার চয়েজ করেছেন ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।

সূত্র জানায়,২০০০সালে বুড়িচং উপজেলার গোবিন্দপুরে ১২০জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজটি যাত্রা শুরু করে। এখান থেকে এই পর্যন্ত পাশ করে বেরিয়েছে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত রয়েছেন। নিয়ম শৃংখলার পাশাপাশি এখানে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তারা নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে।

কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ নান্টু বলেন,কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ স্যারসহ শিক্ষকদের গুণগত শিক্ষার প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের খবর নিতে রাতে বাড়িতে যেতেন শিক্ষকরা। এখানে ধূমপান,রাজনীতি মোবাইল ফোন ও মোটর সাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধ। ভালো ছাত্রের পাশাপাশি এখানে ভালো মানুষ গড়ার চেষ্টা করা হয়।

কলেজের একজন শিক্ষক জানান,পাশের রসুলপুর গ্রাম। কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে সেখানের এক প্রভাবশালীর মেয়েকে আমাদের কলেজে ভর্তির অনুরোধ করি। তিনি আমাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন,কি পাগলের মতো কথা বলছেন? তাকে মহিলা সরকারি কলেজে ভর্তি করাবো। আমাদের বসতেও বলেননি। বাড়ির সামনে থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দুই বছর পর ওই ব্যক্তি এসে অধ্যক্ষের দরজার সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন,মেয়েটিকে শহরের কলেজে ভর্তি করালেও ভালো করেনি। তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটি এসএসসিতে এক বিষয়ে এফ গ্রেড পেয়েছে। তাকে যেন ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। পরে সেই ছেলেটি এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছিলো।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন,এই এলাকাটি শিক্ষায় পিছিয়ে ছিলো। তাই স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় উদ্যোগ নেয়া হয়। ধান খেতে আমরা যাত্রা শুরু করি। প্রথমে শিক্ষকদের ভালো বেতন দেয়া যায়নি। আমরা যা বলেছি,তা করার চেষ্টা করেছি। নীতির বিষয়ে কোন আপোষ করিনি। এতে আমাদের প্রতি কেউ কেউ রাগ করলেও আমরা পিচপা হইনি। বিশেষ করে এখানে নকলের কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ নিয়ম মানা হয়েছে। আমরা সেই মানটি ধরে রেখে এগিয়ে যেতে চাই।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী বলেন,জেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সোনার বাংলা কলেজ। তারা গ্রামের মধ্যে আলোকিত মানুষ তৈরির কাজ করছে। এখানে ভালো ছাত্রের পাশাপাশি ভালো মানুষ গড়ার চেষ্টার বিষয়টি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।