স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন ২০০ নারী

 

কুমিল্লায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই মেশিন বিতরণ

প্রতিনিধি।।

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এবং বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে কুমিল্লার দশটি উপজেলার ২০০ অস্বচ্ছল নারীকে একটি করে উন্নতমানের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। মেশিন পাওয়ার আগে ওই ২০০ অস্বচ্ছল নারীদের কাউকে তিন মাস আবার কাউকে চারমাস বিনা খরচে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
শনিবার (২৯ জুন) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ (উচ্চমাধ্যমিক শাখা) অডিটোরিয়ামে বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশিষ্টজন ও অতিথিরা সেলাই মেশিন তুলে দেন প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের হাতে। এ সময় সকলকে উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে। তাঁদের চোখে এখন শুধুই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন। তবে অনুষ্ঠানে আসা অতিথি এবং অস্বচ্ছল নারীরা বলেছেন- স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নয়, পথ দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কুমিল্লার হোমনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবিদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার ২০০ অস্বচ্ছল নারীদেরকে এই সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানের অতিথি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমন উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রশংসা করেছেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একদিন স্বপ্ন দেখতেন বাঙ্গালী জাতি একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু তিনি যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটা দেশকে পুনরায় গঠন করার আগেই তাঁকে দুষ্কৃতিকারীরা মেরে ফেললেন। পরে সেই দেশের হাল ধরলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা ভিশন ২০২১ শেষ করে এখন ভিশন ২০৪১ নিয়ে কাজ করছি। কুমিল্লায় আমার নেত্রী অনেক মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। আমি নিজেও অনেক মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। আজকে বসুন্ধরা শুভসংঘ অস্বচ্ছল নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে। এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি আগামীতেও তাদের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা জানি বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপকে এই ভালো ও মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।


স্বাগত বক্তৃতায় কথাসাহিত্যিক, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আমরা করোনার সময় উত্তরবঙ্গে হাজার হাজার অসহায় মানুষের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা করেছি। প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়াসহ সারাদেশে আমরা আরো অনেক কল্যাণমূলক কাজ করি থাকি। আমরা নারীদেরকে সেলাই মেশিন দেওয়ার আগে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছি। এরপর সবাইকে একটি করে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছি।
বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা ইমদাদুল হক মিলন আরও বলেন, সারাদেশেই আমাদের মানব কল্যাণমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রকৃত অর্থেই দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই আমরা অস্বচ্ছল নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করেছি। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দিকনির্দেশনায় কুমিল্লাতে আমরা দশটি সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দিয়েছি এবং একত্রে ২০০ জন নারীকে আমরা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছি। আমরা সেই মানুষদেরকে মেশিন উপহার দিয়েছি, যারা নিম্নবিত্ত কিন্তু কারো কাছে হাত পাতে না। এছাড়াও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষদেরকে আমরা বিনা সুদে ঋণ দিয়ে আসছি।


বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও কালের কন্ঠ’র প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, মানুষের মুখে যখন বসুন্ধরা গ্রুপের ভালো কাজের কথা শুনি তখন ভালো লাগে। যারা সেলাই মেশিন পেয়েছেন তাদেরকে অনুরোধ করবো, আপনারা এই মেশিন বিক্রি করে দিবেন না। আপনি ও আপনার পরিবার এটাকে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হবেন। বসুন্ধরা গ্রুপ শুভ কাজ করে যাচ্ছে দেশ ও দেশের কল্যাণে।
পুলিশ সুপার মো.আব্দুল মান্নান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের যে শুভ উদ্যোগ, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৪১ সালের বাংলাদেশ গঠনেরই একটি প্রয়াস বলে আমি মনে করি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ৃয়া বলেন, ২০০ জনকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়ার বিষয়টি ৪১ এর বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে কাজ করার অংশ। আমরা এখান থেকে ২০০ জন উদ্যোক্তা পেলে তাদের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ প্রশিক্ষিত হতে পারবে। এতে করে আমাদের দেশ ও সমাজ থেকে দারিদ্রতা দূর হবে। বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের এই উদ্যোগের জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবু জাফর খান বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের কার্যক্রমগুলো দেখে আমি অভিভূত। তাদের এত জনকল্যাণমূলক কাজ দেখে আমি সত্যি অবাক হয়েছি। ভালো কাজের পেছনে যারা অর্থ ব্যয় করে, তাদেরকে আল্লাহ আরো বড় করে দেন। ভালো কাজের পাশে থাকতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার। এটা সবাই পারে না। আমাদের দেশের কিছু ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা গ্রামের মানুষদেরকে ঋণ দিয়ে দিয়ে তাদেরকে মোটা সুদে কিস্তির টাকার জন্য পরে গলা চেপে ধরে। এই ক্ষুদ্র ঋণের কষাঘাতে মানুষ জর্জরিত। অথচ বসুন্ধরা গ্রুপ বিনাসুদে মানুষকে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ, কুমিল্লার প্রধান উপদেষ্টা এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একটা মেশিন থেকে যাতে একটা ইন্ডাস্ট্রি হয়, সেই প্রত্যাশা নিয়ে আপনারা কাজ করে যাবেন। বসুন্ধরা গ্রুপ এই কাজ নাও করলেও পারতেন। তারা তো ব্যবসার উদ্দেশ্যে এসেছে। কিন্তু তারা অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এটার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা রইলো।