৫বছর ঝুলছে দাউদকান্দির কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু


সেতুতে বদলাবে তিন উপজেলার জীবনযাত্রা
বাহার উদ্দিন খান।।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও কাজ শেষ না হওয়ায় দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা এই তিন উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষকে প্রতিদিন নৌকায় গোমতী নদী পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, রোগী, কৃষক ও কর্মজীবী মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ছেন। অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।এই সেতুটির কাজ শেষ হলে বদলে যাবে দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা এই তিন উপজেলার মানুষের জীবন যাত্রা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৫৭০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্ব নেয় মঈনউদ্দিন বাশী লিমিটেড ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাসে ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। পরবর্তীতে বর্ধিত সময় দিয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সময়ও শেষ হয়ে গেছে, সেতুর নির্মাণকাজ এখনো অপূর্ণ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুর প্রায় ৫১ শতাংশ কাজ এখনও বাকি।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ১৫২টি পাইলের মধ্যে ১৫১টির কাজ শেষ হলেও একটি পাইলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। দক্ষিণাংশে দুইটি পিলারের মধ্যে বিম স্থাপন ছাড়া দৃশ্যমান অগ্রগতি খুব একটা চোখে পড়েনি। প্রায় অর্ধেক কাজ এখনও বাকি।
সেতুটি চালু না হওয়ায় দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ, ভিটিকান্দি, কান্দারগাঁও, বাহেরচর ও বটতলী; তিতাস উপজেলার কাকিয়ালী, মোহনপুর, উজিরাকান্দি, সাতানী, দুধঘাটা, দড়িগাঁও, চারআনি, নন্দীরচর, বারকাউনিয়া, মঙ্গলকান্দি, কালীরবাজার, ভূঁইয়ার বাজার, নন্দনপুর, বালুয়াকান্দি, জগতপুর ও চরকুমারিয়া; মেঘনা উপজেলার আলীপুর, বিনোদপুর, চরবিনোদপুর ও হিজলতলীসহ উক্ত তিন উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষকে নৌকায় পার হতে হচ্ছে। এতে সময় ও শ্রম দুটোই অপচয় হচ্ছে। সেতুর কাজে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ চর অঞ্চলের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসনাবাদ গ্রামের গৃহবধূ রুবিনা আক্তার বলেন, “বর্ষার দিনে নদী পারাপার করতে গেলে ভয় লাগে। অনেক সময় ট্রলার চলে না, তখন ঘরেই আটকে থাকতে হয়। সেতু হলে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে যেত।”
দাউদকান্দির চরাঞ্চলের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, “কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গেলে দ্বিগুণ খরচ হয়। নৌকায় ঝড়বৃষ্টি সামলাতে হয়, কখনো নষ্ট হয়ে যায় ফসল। সেতুর জন্য এত অপেক্ষা করেও কোনো সুফল পাচ্ছি না।” মেঘনা উপজেলার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, “ঢাকায় যাতায়াত করতে হলে আগে উপজেলা সদর যেতে হয়। সেতুটি হলে অর্ধেক পথ কমে যেত। শুধু সময় নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও আমরা উপকৃত হতাম।”
উত্তর ইউনিয়নের শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “সেতুর নির্মাণ দেখে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত হবে ভেবে আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।”
গোমতী নদীর ওপর কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুটি তিন উপজেলার মানুষের জন্য জীবনরেখার মতো। অথচ সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় হাজারো মানুষ প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের গাফিলতিতেই কাজ দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সেতুর কাজে ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাইমুর রহমান বলেন, “বর্ষাকালে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। জমি অধিগ্রহণ, কোভিড মহামারি আর বন্যার কারণে দেরি হয়েছে। আমরা আশা করছি, আরও ছয় মাস সময় পেলে কাজ শেষ করতে পারব।”
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জমা দেওয়া ওয়ার্ক প্ল্যানের কোনোটিই সঠিক হয়নি এবং দুই দফা সময় দিয়েও কাজ শেষ হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। প্রয়োজনে জরিমানা বা চুক্তি বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য দ্রুত সেতুটি চালু করা।”