৫৮ বছরে একবারও কোরবানি দিতে পারেননি মোস্তফা!
মোহাম্মদ শরীফ।
‘দুনিয়ায় কষ্ট করে চলতেছি। হয়তো ভাগ্যে এটাই আল্লাহ লিখে রেখেছিলেন। কষ্ট হলেও হালাল পথে কাজ করে খাচ্ছি বাবা। এই কষ্টের জীবনের বিনিময় আখেরাতে যদি শান্তি পাই, এটাই আশা’ -রিক্সার প্যাডেলে বসে বলছিলেন ৫৮ বছর বয়সী গোলাম মোস্তফা।
কুমিল্লা নগরীর চকবাজার থেকে টমছম ব্রিজ, শাসনগাছা, আদালত পাড়া ও মোগলটুলি। সকাল থেকে সন্ধ্যা এসব অলিগলিতে তিন চাকার অটোরিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়ান গোলাম মোস্তাফা। শুক্রবার সকালে পুরাতন চৌধুরীপাড়া হোমিওপ্যাথি কলেজ মোড়ে কড়ই গাছের ছায়ার নিজের রিক্সায় বসে প্রশান্তি খুঁজছিলেন তিনি। গ্রামের বাড়ি রংপুরের কুড়িগ্রামে। ১০ বছর যাবৎ কুমিল্লা নগরীর ডুলিপাড়ায় থাকছেন পরিবার নিয়ে। এর আগে রিক্সা চালিয়েছেন ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরে। তিন ছেলে তিন মেয়ে সংসার ছিল তার। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে পরিবার সাথে রাগ করে ১০ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছে।
বয়সে ছাপ পড়ে গেছে শরীরে। পরিবারের পাঁচ সদস্যের ঘানি টানতে এখনো রিক্সা নিয়ে বের হতে হয় গোলাম মোস্তফাকে।
আসন্ন ঈদুল আযহা কোরবানি নিয়ে কথা হয় তার সাথে। ৫৮ বছরের জীবনে একবারও নিজে কোরবানি দিতে পারেননি মোস্তফা। কোরবানি নিয়ে জীবনের অনুশোচনা করে বলেন, ‘ছোট বেলায় সংগ্রাম (১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ) দেখেছি। জীবনে কত ঈদ দেখেছি। একবারও নিজে কোরবানি দিতে পারিনি। ঈদে পাড়া প্রতিবেশীরা মাংস দেয়, তাই খেতে পারি’।
দীর্ঘ দিনের বিড়ি আর পান খাওয়ার চিহ্ন তার দাঁতে। শেষ কবে গরুর মাংস খেয়েছেন? এমন প্রশ্নে হেসে বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদে খেয়েছি বাবা। মানুষে দিয়েছিল। আমরা গরীব মানুষ কি সাত-আটশো টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনে খেতে পারবো?’।
মোস্তফার পায়ে শক্ত গুটির মতো হয়ে গেছে। এই পা নিয়ে তিনি রিক্সা চালান। প্যাডেল রিক্সা চলাকালীন তার বেশি কষ্ট হতো।
ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা বের হওয়াতে তার জন্য সুবিধা হয়েছে। এই বয়সে রিক্সা নিয়ে পথে বের হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে মোস্তফা বলেন, ‘কাজে একজন, খায় পাঁচজন। পাঁচজনের সংসার প্রতিদিন তিনশো টাকার বাজার লাগে। বাসা ভাড়া ছেলে মেয়ের পড়ার খরচ। কি না লাগে একটা সংসারে? পরিবারে তো আর কেউ নেই যে কাজ করবো। আমি না বের হলে সবাই উপোস থাকতে হবে’।
রিক্সা চালিয়ে জীবনের বিশাল একটি অংশ পার করা মোস্তফা অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ আছে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দেয়। আবার অনেকে আছে ৪০ টাকার ভাড়া গ্যাজাগ্যাজি করে ২০ টাকা দিয়ে চলে যায়’। তবে জীবন নিয়ে তার কোনো হতাশা নেই। তার ভাষায়, ‘ আল্লাহর রহমতে চলে যাচ্ছি!’।