কুমেক হাসপাতালকে থেকে যেভাবে রোগী বিক্রি হয়!

হাসিবুল ইসলাম সজিব।।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক)হাসপাতাল। ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্য সেবার বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে রোগীরা দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে- সরকারি হাসপাতালের রোগী বিক্রি করা হয় বেসরকারি হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনের আলো নিভে নামে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা হলে আনাগোনা বাড়তে থাকে দালাল চক্রের। রাত বাড়ার সাথে সাথে জরুরি বিভাগ ও তার সামনে খালি জায়গায়, ক্যাজুয়ালটি বিভাগ, গাইনি বিভাগ, শিশু বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ, সার্জারি বিভাগে দেখা মিলবে তাদের। কেউ করছে পরীক্ষা নীরিক্ষার দালালি আবার কেউ করছে হাসপাতাল হতে রোগীদেরকে ডাক্তার নাই,এখন অপারেশন হবে না এসব ভুল বুঝিয়ে প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে বিক্রি করে দেন। ঐসব হসপিটাল দিয়ে আসতে হয় বিলের চেয়ে বেশি টাকা। কাছাকাছি ১২-১৫টা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬০-৭০ জন লোক দালালি করে। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সে ৪-৫ জন লোক কাজ করে। তাদের কাছে কর্তৃপক্ষ অসহায়। পুলিশে ধরে নিয়ে গেলেও অদৃশ্য ক্ষমতার কারণে ছুটে চলে আসেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,গত ৬ জুন রাত ২:১০ মিনিটের সময় একজন ডেলিভারি রোগী আসেন জরুরি বিভাগে। টলিম্যান তখন খাবার খেতে গেছেন। রোগী ভাগিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যরা নিজে টলি করে রোগী নিয়ে এতো রাতে ডাক্তার নাই এসব বুঝিয়ে নিয়ে গেছেন প্রাইভেট হসপিটালে। প্রতিটি রাত কোন না কোন রোগীকে তারা এভাবে নিয়ে যান নগরীর বিভিন্ন হসপিটালে।
ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন জানান, আমাদের রোগীর পেট ব্যথা নিয়ে মেডিকেলে আসলে তাকে দালালরা নগরীর একটা প্রাইভেট হসপিটাল ভর্তি করান। আমরা এখনো গিয়ে মেডিকেলে রোগী নিয়ে আসতে গেলে ০৫ মিনিটে আমাদের কাছে থেকে বিল রাখে ৪ হাজার টাকা। এলাকার মানুষ হয়ে আমাদের সাথে এমন করে বাকিদের কথা বাদই দিলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কাজের অভিযুক্ত একজন জানান, আমাদের সাথে শহরের কিছু প্রাইভেট হসপিটালের সাথে কন্ট্রাক রয়েছে। টাকার বিনিময়ে আমরা তাদেরকে রোগী দেই। আমাদের কাজে অসুবিধা যেন না হয় সেই জন্য মেডিকেলের ভিতরও টাকা দিয়ে লোক ম্যানেজ করে রাখি।
ক্যাজুয়ালটি বিভাগের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, দালালদের গোড়া খুবই শক্ত। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা কঠিন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ- পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ শাহাজাহান জানান,দালালরা রোগীদেরকে হাউজিং নামিয়েও টাকা পয়সা রেখে ছেড়ে দেয় এমন ঘটনাও ঘটেছে। মেডিকেল দালাল মুক্তকরণে আমাদের পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের হাসপাতালে কোন কর্মচারী এসব কাজে জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।