মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিয়েছেন কি ?

 

inside post

মমিনুল ইসলাম মোল্লা

রমজান হচ্ছে মুসলমানদের জন্য পূণ্য অর্জণের মাস। যদি শোনা যায় আগামী দিন মোবাইলে যে যত টাকা রিফিল করবে তার একাউন্টে ইনস্ট্যান্ট বোনাস হিসেবে দ্বিগুণ টাকা জমা হবে; তাহলে পরদিন সবাই ফ্লেক্সিলোডের দোকানে নিশ্চিত ভীড় জমাবে।  কিন্তু মাহে রমজান মাসে প্রতিটি এবাদত ৭০ গূণ বৃদ্ধি করার ঘোষণা পেয়েও আমরা সেদিকে পূর্ণভাবে দাখিল হচ্ছি না কেন? প্রকৃতপক্ষে এ মাসে এবাদত করে আমরা বেহেস্তে যাবার পথ প্রশস্ত করতে পারি। হাদিসে আছে যে ব্যাক্তি রমজান মাস পেয়েও পাপ মোচন করতে পারল না তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই। তাই এসময় বিদআত থেকে দূরে থেকে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, ও দান-সদকার মাধ্যমে অধিক আমল করে সারা বছরের ত্রæটিগুলো পূরণ করতে পারি। সিয়ামের আসল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জণ। এব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন-হে বিশাবাসীগণ, তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধানদেয়া হল। যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েলি। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জণ করতে পার। (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৮৩)। আর তাকওয়া বা ফরহেজগারী হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। যারা তাকওয়া অর্জণের মাধ্যমে সিয়াম পালন করে, তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিনত হয়। আল্লাহ বলেন-সিয়াম শুধু আমার জন্য, আমি তার প্রতিদান দেব। আমার জন্যই সে পানাহার ত্যাগ করে থাকে।

মাহে রমজানে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। রোজার আরেক নাম সংযম কোন কোন বিষয়ে আমরা সংযম পালন করলেও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আমরা সংযত নই। আর এ অতিরিক্ত খাওয়ার অপর নাম মুটিয়ে যাওয়া। তছাড়া এতে খাদ্যের অপচয়ও হয়।  রমজানের শেষের দিকে কাপড়ের মার্কেটগুলোতে মহিলাদের ভীড় পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ মার্কেটে যাওয়ার আগে পার্লার থেকেও সেজে যান। এমতাবস্থায় তাদের পর্দা রক্ষা করা কঠিন। যদিও পর্দা করা মুসলিম নারীদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। পর্দার ব্যাপারে সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে-ঈমানদার নারীকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। বিশেষভাবে সজ্জিত নারীদের দিকে পুরুষরা দৃষ্টি দিলে তাদের রোজায় ত্রæটি দেখা দেবে। কেননা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-মুমিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।

 

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে দঃখজনকভাবে কিছু কিছু পেশাজীবিদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। পরিবহন ব্যবসাযীরা পুরাতন যানবাহনগুলো মেরামত করে রাস্তায় নামিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে, পুলিশের চাঁদাবাজির পরিমান বেড়ে যায়, ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের মজুদ গড়ে তোলে এবং দাম বৃদ্ধি করে। যা মোটেও রমজানের আকিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। হিন্দুদের দুর্গাপুজার সময় এবং খৃষ্টানদের বড়দিনে এমনটি দেখা যায় না। রোজার সময় পেট খালি থাকায় আমরা অনেকেই কাজ-কর্মে মন বসাতে পারিনা। তাই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে গল্প-গুজব করে সময় কাটাই। এছাড়া এসময় রোজাদাররা দাবা, লুডু, কেরাম ,তাসসহ বিভিন্ন ধরণের খেলায় মত্ত থাকে। আমরা অনেক সময় গল্পের ছলে মিথ্যা বলি অথবা জেনে না জেনে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় গীববত বা অন্যের দোষ-ত্রæটি উপস্থাপন করি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন-সিয়াম ঢাল স্বরুপ। যতক্ষণ না তাকে মিথ্যা কিংবা পরনিন্দা দ্বারা ভেঙ্গে ফেলা হয়। (তোবরানি, আওসাত, জামে সগীর-২য় খন্ড-৫১ পৃষ্টা)। অনেকেই রোগের অজুহাতে রোজা থাকা থেকে নিজেদের বিরত রাখে, যা আদৌ উচিত নয়। কয়েকটি রোগের ঔষধ রোজা রেখেও ব্যবহার করা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বদ্যিালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম অব্দুল্লাহ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন,চোখ, কান, নাকের অসুখে ড্রপ, বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি জিহবার নিচে নাইট্রোগিøসারিন ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। হাঁপানী রোগী রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। নবি করিম (সাঃ) বলেন-যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও অশ্লিল কাজ ছাড়লোনা, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। তাই রোজাদার ব্যক্তি রোজার পূর্ণাঙ্গ সওয়াব পেতে হলে রোজা অবস্থায় কখনও মিথ্যা কথা বলা, পাপ কাজ, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, জবরদখল, সন্ত্রাস, বোমাবাজি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারসহ সুদ, ঘুষ, দুর্র্নীতি, প্রতারণা, ধূমপান, মাদকদ্রব্য, জুয়াখেলা, যৌনাচারসহ কোন ধরণের অপকর্মে লিপ্ত হবেন না। হযরত মুহম্মদ (সঃ) বলেন- যারা পরিপূর্ণভাবে রোজা পালন করে তারা রমজান শেষে সদ্য ভ‚মিষ্ট শিশুর মতো পুতঃপবিত্র হয়ে যায়।

 

লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,

প্রাক্তন প্রভাষক, শাহতলী কামিল মাদ্রাসা,পুষ্টিবিদ ও সাংবাদিক, কুমিল্লা। ০১৭১১৭১৩২৫৭

আরো পড়ুন