চীনের মহাকাশ-গবেষণাগার ওয়েন থিয়ান–ওয়াং হাইমান ঊর্মি
চীনের মানববাহী মহাকাশ কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, বেইজিংয় সময় গতকাল (রোববার) দুপুর ২টা ২২ মিনিটে লংমার্চ-৫বি রিমোট সেন্সিং পরিবাহক-রকেটের সাহায্যে ‘ওয়েন থিয়ান’ নামক মহাকাশ-গবেষণাগারটি চীনের হাইনান প্রদেশের ‘ওয়েন ছাং’ মহাকাশ উত্ক্ষেপণকেন্দ্র থেকে মহাকাশে পাঠানো হয়। প্রায় ৪৯৫ সেকেন্ড পর, ‘ওয়েন থিয়ান’ রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্বনির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে।
এদিন ‘ওয়েন ছাং’ উত্ক্ষেপণকেন্দ্র ছিল সূর্যের আলোয় ঝলমল। জনতার উল্লাসের মধ্যে লংমার্চ-৫বি পরিবাহক-রকেটের সাহায্যে ‘ওয়েন থিয়ান’ মহাকাশ-গবেষণাগার মহাকাশের পানে ছুটে যায়। উত্ক্ষেপণ দেখতে শানসি থেকে আসেন জনাব সু। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
“আমি খুব উত্তেজিত। কারণ, ‘ওয়েন থিয়ান’ সফলভাবে উতক্ষেপিত হয়েছে। এটি চীনের মহাকাশকেন্দ্রের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে এই ঐতিহাসিক ঘটনা উপভোগ করতে এসেছি।”
চীনের সিছুয়ান প্রদেশের মিয়ান ইয়াং শহরের জনাব চিয়াং সাংবাদিকদের বলেন, “সবাই বলে যে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সরাসরি উত্ক্ষেপণ দেখা টিভি-র দৃশ্যের মতো নয়। আমরা জাতীয় পতাকা হাতে এখানে এসেছি, নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করার জন্য।”
উত্ক্ষেপিত ‘ওয়েন থিয়ান’ মহাকাশ-গবেষণাগার চীনের মহাকাশকেন্দ্রের প্রথম বৈজ্ঞানিক মডিউল। এটি একটি ওয়ার্কিং কেবিন, একটি এয়ারলক কেবিন, এবং একটি রিসোর্স কেবিন নিয়ে গঠিত। এর মোট ওজন প্রায় ২৩ টন। এটি মূলত মহাকাশচারীদের অবস্থান, প্রস্থান কার্যক্রম, ও মহাকাশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি, মহাকাশকেন্দ্র ব্যবস্থাপনার জন্য এটি ‘থিয়ান হ্য’ মূল কেবিনের ব্যাকআপ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ‘ওয়েন থিয়ান’-এর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনায় মহাকাশ বিজ্ঞান গোষ্ঠীর পঞ্চম একাডেমির স্পেস স্টেশন সিস্টেমের উপ-প্রধান ডিজাইনার লিউ কাং বলেন, ‘ওয়েন থিয়ান’ ৫ মিটার লম্বা একটি রোবটিক হাত নিয়ে গেছে। এটি ছোট ও নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে। তিনি আরও বলেন,
“এটি ছোট ছোট যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে পারে ও তুলনামূলকভাবে সূক্ষ্ম কাজ সম্পাদন করতে পারে। ভবিষ্যতে, একে ১৫ মিটার দীর্ঘ রোবটিক বাহুতে রূপান্তর করা যেতে পারে।”
‘ওয়েন থিয়ান’ মহাকাশকেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। শেনচৌ-১৪ মহাকাশচারীরা পরে ‘ওয়েন থিয়ান’-এর প্রবেশ করবেন। ৪টি গবেষণা-ক্যাবিনেট ও ২২টি এক্সট্রাভেহিকুলার লোড অ্যাডাপ্টারসহ ‘ওয়েন থিয়ান’ যেন মহাকাশে একটি বড় বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার। চীনের বৈজ্ঞানিক একাডেমির অ্যাপ্লিকেশন কেন্দ্রের গবেষক ও মনুষ্যবাহী মহাকাশ অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমের উপ-প্রধান প্রকৌশলী লুয়ে ছুং মিন লাইফ ইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট ক্যাবিনেটসম্পর্কিত আলোচনায় বলেন,
“লাইফ ইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট ক্যাবিনেটে মহাকাশে বিভিন্ন জীবের বড় হওয়ার বা বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করা হবে। বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ, চারা, গাছপালা এবং ছোট আকারের প্রাণী নিয়ে মহাকাশ-পরিবেশে গবেষণা করবেন নভোচারীরা। তারা দেখার চেষ্টা করবেন জীবের বৃদ্ধি, বিকাশ, ও বিপাকে মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব কেমন।”
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে, মহাকাশকেন্দ্রে পাঠানো হবে দ্বিতীয় মহাকাশ-গবেষণাগার ‘মেং থিয়ান’। এরপর মহাকাশকেন্দ্রটি ‘T’ আকৃতির হবে এবং চীনের মহাকাশকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন হবে।
লেখিকা: ওয়াং হাইমান (ঊর্মি)
চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।