কখন না জানি ভেঙে পড়ে!
কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ ভবনে ঝুঁকি
আবদুল্লাহ আল মারুফ।।
কুমিল্লা জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালত ভবনটির অনেক অংশেই ফাটল ধরেছে। ভবনের নিচতলার বারান্দার মাঝখানের পুরো অংশই দেবে গেছে। পিলারের গোড়ায় ফাটল ধরে তা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। এই ভবনেই সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিনের খাস কামরা। তবে এসব কিছুর পরেও গত তিন বছরে একবারও ব্যবস্থা নেয়নি আদালতের কর্মকর্তারা। এতে ঝুঁকিতে আছেন বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীরা। আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের বক্তব্য- কখন না জানি দেয়াল গুলো ভেঙে পড়ে!
সরেজমিনে কুমিল্লা আদালত ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ফটকের সামনের দাঁড়িয়ে আছে ২০০০সালের দিকে নির্মিত চারতলা ভবনটি। ভবনে আছে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজের খাস কামরাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এজলাস।
আদালত ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পশ্চিম কোনায় চোখ আটকাবে ভবনের একটি বড় ফাটলে। সামনে এগিয়ে বারান্দায় ঢুকলে চোখে পড়বে টাইলসসহ বারান্দার মাঝ বরাবর অনেকটাই দেবে গেছে। বারান্দার পিলার গুলিতে তাকালে আঁৎকে উঠবেন যে কেউ। পিলার গুলি থেকে বারান্দার ফ্লোর অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।
নিচতলার হাতের বাম পাশে কয়েকটি কক্ষ যেতেই নামাজ পড়ার স্থান। এই অস্থায়ী মসজিদের ভেতরের অবস্থা আরও জরাজীর্ণ। মসজিদের মাঝখানের কিছু অংশ কয়েক ইঞ্চি দেবে গেছে। ছাদের অংশে কয়েক ফুট লম্বা ১০ টির বেশি ফাটল। একই অবস্থা খাবারের ক্যান্টিনেও।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও কুমিল্লা জজ কোর্টের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মাযহারী বলেন, নামাজ ও খাওয়ার ক্যান্টিনে যেতে হয় এই বারান্দা দিয়ে। বারান্দার দেবে যাওয়া আর মসজিদের ফাটল চোখে পড়েছে। জেলার বাইরে থেকেও মানুষ আসেন। দেখতেও কেমন দেখায়। এটি সংস্কার করা উচিৎ।
এদিকে নাজুক অবস্থা কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম মোল্লার কক্ষে। এই কর্মকর্তার কক্ষের ডানপাশের দেয়ালে ফাটল। পেছনের রেকর্ড রাখার রুমে প্রবেশ করে পানি। এতে একাধিকবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।
এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম মোল্লা বলেন, এসেই এই ফাটল দেখেছি। মাঝে মাঝে ভয় লেগে উঠে। এখানকার সবাই এই ফাটল দেখে আমাকে এটা সেটা বলে। কিন্তু কি করার! ফাটল নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের। আমার কক্ষ দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিন মাঝে মাঝে খাস কামরায়ও প্রবেশ করেন। আমি উনাকে বলেছি। উনি গণপূর্ত অধিদফতরে কল দিয়ে জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক এসে দেখে যান। কিন্তু পরে আর খবর থাকেনা।
কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের বলেন, আমি ফাটল দেখেছি। এটা আমরা ব্যবস্থা নেব। কেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা লিখিতভাবে জানাননি তারও ইনকুয়েরি করবো।
আদালতের অনুরোধের পরেও কেন কাজ করছেন না এমন প্রশ্নে কুমিল্লা গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর রাসেদুল করিম বলেন, আমরা আদালতের অভিযোগের বিষয়ে জানি। উনারা লিখিত অভিযোগ না দিলেও আমাদের জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় কল দিয়ে জানিয়েছেন। আমিও একবার গিয়ে দেখেছি। রেকর্ড রুমের পানি আসার বিষয়টি আমরা ফাইন্ড আউট (খুঁজে বের করা) করতে পারিনি। বাকি গুলোর টেন্ডার করে পাঠিয়েছি। আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। কিন্তু সব গুলোই নিয়ম মেনে আগেই টেন্ডারের আওতায় আনতে হয়। পরে অনুমতি পেলে কাজ করতে হয়। আমরা আদালতের বিষয়টি দেখবো।