‘হাসিনার পতন না হলে জীবন কাটতো দুবাইয়ের জেলে’

‘ দেশের মাটিতে আর আসতে পারতাম না’
 প্রতিনিধি ।।
‘কখনো আর পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে সে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আন্দোলন সফল না হলে যদি হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকতো, তাহলে জীবনে দেশের মাটিতে আসতে পারতাম না। আমাদের জীবন কাটত দুবাইয়ের জেলে। দেশের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় সাজা মওকুফের পর দেশে আসতে পারলাম। বিদেশের বাড়িতে টাকা-পয়সা, ব্যবসা সব হারিয়েছি, তবে হাসিনার পতন ও দেশ আবার স্বাধীন হওয়ায় মনে কষ্ট নেই।’
শুক্রবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে ৪৫ দিন পর মুক্ত হয়ে দেশে আসা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে ফরিদ আহমদ শাহীন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমর্থনে ও শেখ হাসিনার সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদে দুবাই, শারজাহ, আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভ করেছিলেন বাংলাদেশিরা। রাজতন্ত্রের দেশটিতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বিক্ষোভ থেকে আটক করা হয় অনেককে। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেন দেশটির আদালত।
শাহীন বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে আইন-কানুন মেনে বেশ সুনামের সঙ্গে দুবাইতে ব্যবসা করে আসছি। বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গত ১৮ জুলাই দুবাইতে থাকা প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করি। পরদিন ওই দেশের পুলিশ আন্দোলনরত বাঙালিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। এ খবর বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে নানা শঙ্কা দেখা দেয়।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। পরবর্তীতে বিদেশের মাটিতে আন্দোলনের ফলে সাজাপ্রাপ্তদের সাজা মওকুফের বিষয়ে আরব আমিরাত সরকারকে অনুরোধ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমিরাত সরকার গত ৫ সেপ্টেম্বর আটকৃকত ১১৪ প্রবাসীকে বেকসুর খালাস দেয়। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রথম ধাপে আটককৃত ৫৭ জন প্রবাসী দেশে ফেরত আসেন। তাদেরই একজন ফরিদ আহমদ শাহীন।