রাত গভীরে বাড়ে ট্রাক্টর -ভেকুর শব্দ !
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার সব-কটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাটি কাটা ও ক্রয় বিক্রয়ের তথ্য। বাদ যাচ্ছেনা সরকারি খাল বিলও। রাতের আঁধারে কৃষি জমি হয়ে যাচ্ছে পুকুর। উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের সোনাপুর, ডলবা, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের একতা বাজার অংশে, ছাতিয়ানী, কনকাপৈত ইউনিয়নের মাসকরা, চিওড়া ইউনিয়নে সারপটি, কালিকাপুর ইউনিয়নে মিরশানি বাজার এলাকায় বিদ্যুতের সাব স্টেশনের পাশে সরকারি খাল, জগন্নাথদিঘি ইউনিয়নে চৌধুরী বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এ কাজে এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে ছোট বড় মাটি কাটা চক্র। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে চলতি মৌসুমে মাটির ব্যবসায় জড়িয়েছেন দীর্ঘদিন সুযোগ বঞ্চিত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। অনেক জায়গায় অবৈধ এই কাজের জন্য ঘরে বসে মাসোহারা নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
বিভিন্ন জায়গা থেকে সচেতন নাগরিকদের দেয়া অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন মাঠপর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাটি ব্যবসায়ীকে জরিমানা, মাটি কাটা ও পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহনের ব্যাটারি জব্দ করা হয়। জব্দ করা হয়েছে বেশ’কটি ড্রাম ট্রাক ও ভেকু। এরপরও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি এই অবৈধ কাজে। বর্তমানে বেশিরভাগ এলাকায় রাতের অংশে শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত চলে এই কাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দিনের বেলায় প্রশাসনের অভিযানের ভয় থাকে। তাই রাতেই চলে মাটি কাটার কাজ।
উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) জাকিয়া সারোয়ার লিমা বলেন, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ভোর থেকে বিরতিহীনভাবে অভিযান চলছে। গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৮/১০ টি ভেকু, ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর জব্দ করা হয়েছে। প্রশাসন রাতে অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে যাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। এছাড়াও মাটি কাটা প্রতিরোধ কমিটি ব্যবস্থা নিবে। তিনি আরো বলেন, এ কাজে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এবং জব্দকৃত ভেকু ট্রাক্ট্ররসহ কোন কিছুই ফেরত দেয়া হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়ের আহমেদ বলেন, কৃষি জমির মাটি কেটে যে ক্ষতি করা হচ্ছে তা একশো বছরেও পূরণ হবেনা। মাটি কেটে যে পরিমাণ গর্ত করা হয় তা কয়েক বছরেও ভরাট হবার নয়। ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধে আমাদের আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। তবে খবর পেলে সরজমিন গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হচ্ছে। আমরা মানুষকে মাটি বিক্রিতে নিরুৎসাহিত করছি, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব জানিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সরকারি সম্পদ ও ফসলি জমি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটির কাটার কাজে ব্যবহৃত ভেকু ড্রাম ট্রাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফসলি জমির মাটি কাটা রোধে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে মাটি কাটা প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি অবৈধ মাটি কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ আমোদকে বলেন,জেলার প্রায় শতভাগ ইটভাটায় কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটভাটাকে অনুর্বর জমি ও খাল নদী থেকে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এবিষয়ে আমরা বিভিন্ন ফোরামে সচেতন করে যাচ্ছি।