নেতানিয়াহু: আধুনিক সন্ত্রাসবাদের জনক

মনোয়ার হোসেন রতন।।

বিশ্ব যখন শান্তি, সহাবস্থান এবং মানবাধিকারের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন কিছু নেতৃত্ব সেই স্বপ্নকে নিঃসংশয়ে দুঃস্বপ্নে রূপান্তর করে। এমনই একজন—বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি কেবল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নন, বরং আধুনিক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের এক নির্মম রূপকার। তার নেতৃত্বে ইসরায়েল আজ গণহত্যা, জাতিগত নির্মূল এবং মানবতার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অপরাধে অভিযুক্ত একটি রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রের ছায়ায় সন্ত্রাসের বিস্তার
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনের জনগণের উপর দখল, নির্যাতন ও নিপীড়নের যে ধারাবাহিকতা, তা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে পরিণত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বর্বরতায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা আগ্রাসন ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সামরিক আক্রমণে পরিণত হয়েছে।
এ আগ্রাসনে বোমা বর্ষণে ধ্বংস হয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, শিশু আশ্রয়কেন্দ্র, এমনকি জাতিসংঘের ত্রাণ ক্যাম্পও। নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে, আহতের সংখ্যা অগণন। তবুও নেতানিয়াহু একে বলছেন- “আত্মরক্ষার অধিকার”! অথচ বাস্তবতা হলো—এটি একটি পরিকল্পিত জাতিগত নির্মূল অভিযান, যেখানে অস্ত্রধারী নয়, বরং গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাই প্রধান শিকার।
গণহত্যার আরেক নাম নেতানিয়াহু
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর UN OCHA-র হিসাব বলছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৮৫ জন নিরপরাধ মানুষ নিহত হচ্ছেন। Amnesty International ও Human Rights Watch ইসরায়েলকে একটি ‘আপারথেইড রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাঁদের মতে, এটি একটি আইনসঙ্গত গণতন্ত্র নয়, বরং জাতিগত বিভাজনের এক আধুনিক মডেল।
BBC ও Al Jazeera-র অনুসন্ধান অনুযায়ী, গাজা হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের ৭৫ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে। অর্থাৎ, এ হত্যাযজ্ঞে পশ্চিমা শক্তিগুলো প্রত্যক্ষ সহযোগী। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (ICC) ইতোমধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
পশ্চিমা ভণ্ডামি ও মানবতা বিরোধিতা
যেখানে একদল শিশু ধ্বংসস্তূপে কান্না করছে, সেখানে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো শান্তির বুলি আওড়াতে আওড়াতে নেতানিয়াহুকে সহায়তা করছে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে। মানবতা, গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের কথা বলা এ সকল রাষ্ট্র যেন নির্লজ্জভাবে এক দানবীয় রাজনীতিককে রক্ষা করছে।
জাতিসংঘ আজ নির্বাক, নিরাপত্তা পরিষদ আজ পঙ্গু, আর আইসিসি আজো অপেক্ষমাণ—এ যেন এক নিষ্ঠুর নাটক, যেখানে ন্যায়ের নামে অন্যায়ের বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।
ইতিহাস কী লিখবে?
নেতানিয়াহু আজ আর কেবল একজন রাষ্ট্রনেতা নন—তিনি ইতিহাসের এক কালো চরিত্র, যার রক্তাক্ত হাতে লেগে আছে শিশুদের কান্না, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বপ্ন এবং হাজারো নিরপরাধ প্রাণের রক্ত।
একদিন ইতিহাস নিশ্চয়ই উচ্চারণ করবে—“নেতানিয়াহু, তুমি রাষ্ট্রের পোশাকে মানবতার শত্রু, আধুনিক সন্ত্রাসবাদের জনক।”
এ পৃথিবী তোমার নাম স্মরণ করবে সেইসব মাতার চোখের জল, শিশুর আর্তনাদ, এবং মানবতা হত্যার এক রক্তাক্ত প্রতীক হিসেবে।