বরুড়ায় লতি যাচ্ছে বিদেশে
ধানের চেয়ে অধিকতর লাভজনক হওয়ায় কচু চাষের দিকে ঝুঁকেছেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কৃষকেরা। এবছর উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমিতে কচুর চাষ হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৬টন কচু লতি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ১৫টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫লাখ ৪০হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে দিনে ৮০টন কচুর লতি বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বরুড়ার কচু ব্যাপারীরা। আর উৎপাদিত লতির ১০শতাংশ বিদেশে রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়,১শ’ বছরের বেশি সময় ধরে বরুড়ায় কচু লতির চাষ হলেও গত তিন বছর ধরে বিদেশি লতি রপ্তানি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে অনেক বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে এ পেশায়। ধান চাষে লাভ তুলনামূলক কম ও ঝুঁকি থাকায়, লতি ও অন্যান্য শাকসবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
উপজেলার আগানগর, ভবানীপুর ও দক্ষিণ খোশবাস ইউপিতে বেশি কচু চাষ হয়। অন্যান্য ইউপিতে কচুর চাষ হলেও তা তুলনামূলক কম। এ উপজেলায় দুই ধরনের কচু বেশি চাষ হয়। একটি কচু লতি (কচু রাজ) আর অন্যটি পানি কচু (স্থানীয় ভাষায় বরিশাইল্যা কচু)। কচু রাজে শুধুমাত্র লতি হয়। পানি কচুর লতি ও লতির ফলন শেষ হলে পুরো গাছসহ বিক্রি হয়। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝিতে বরুড়ায় রোপণ শুরু হয় কচু গাছের। মাঘ মাস পর্যন্ত ধাপে ধাপে রোপণ করা হয় কচু গাছ। লতি রাজের চেয়ে পানি কচু রোপণ শুরু হয় তাড়াতাড়ি। ফলন শুরু হওয়ার পর একটানা ৮মাস লতি পাওয়া যায়। মাঘ মাসে লতি কিছুটা কম পাওয়া গেলেও চৈত্র মাসে এর ফলন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়। শীতকালীন সবজির আধিক্য কমে যাওয়ায় এসময়ে দামও পাওয়া যায় বেশি। কৃষকরা জানিয়েছেন, সব মৌসুম মিলিয়ে গড়ে প্রতি কেজি লতির দাম পড়ে ২৫টাকা করে, গাছসহ কচুর দাম পড়ে প্রতি কেজি ২০টাকা করে। কচু লতি চাষে প্রতি শতকে খরচ পড়ে ৮শ টাকা, পানি কচু চাষে প্রতি শতকে খরচ পড়ে এক হাজার টাকা।
বরুড়া উপজেলার দুই হাজার কৃষক কচু চাষের সাথে সম্পৃক্ত। পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীরও কর্মসংস্থান হচ্ছে কচু চাষের মাধ্যমে। স্থানীয় কৃষকরা লতি তুলে বাড়িতে নেন, সে লতি পরিষ্কার করে আটি বাঁধেন নারীরা। আটি বাঁধা শেষ হলে স্থানীয় ব্যাপারীরা নগদ টাকা দিয়ে লতি কিনে নেন। তারপর ছোট ছোট ভ্যানে করে উপজেলার বিজয়পুর, আড়াওটি, বাতাইছড়ি, সরাপতি, মুগুজি, বারইপুর গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে স্তূপ করা হয়। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে করে কচুর লতি নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম ও কৃমিল্লার নিমসারের আড়তদারদের কাছে। ছোটবড় ৫০জন ব্যাপারী কচুর লতি সংগ্রহ করেন। কুমিল্লার বুড়িচংয়ের নিমসারে কচুর লতি বিক্রি করার জন্য আলাদা কর্নার রয়েছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার আড়তদারদের কাছে বিক্রি হওয়া লতির একটি অংশ অ্যাজেন্সির মাধ্যমে চলে যায় ইতালি, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। ইতালি ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশে কুমিল্লার বরুড়ার লতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হয়ে দিনে একটন লতি বিদেশে রপ্তানি হয় বলে জানা গেছে।
এছাড়া কুমিল্লা থেকে ২০২০ সালে দেড় লাখ চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়েছে। ২০২১সালে এক লাখ চারা বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লতি রাজের চারা ৩টাকা ও পানি কচুর চার ৪টাকায় বিক্রি হয়। চারা রোপণের পর ভাদ্র মাসে গাছের মূল থেকে নতুন চারা গজায়। সে চারা বিক্রি হয়, আবার একই চারা দিয়ে বরুড়ার কৃষকরা নতুন নতুন জমি আবাদ করেন।
বরুড়া বাংলাদেশের কৃষিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। কচুর লতি রপ্তানি ও বিপণন বিষয়ে কৃষকদের সর্বোচ্চ সহায়তা করতে হবে। আমরা মনে করি, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে লতি চাষে আরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হবে।