ইসলামে ধর্ষকদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
আমোদ ডেস্ক।।
নারী ও শিশু ধর্ষণ বাংলাদেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে নারী ও শিশু ধর্ষণের জগন্যতম ঘটনা। দেশের কোথাও ধর্ষক নামের নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী ও শিশুরা। দেশে প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং ধর্ষণ শেষে নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা। অপ্রতিরোধ্য নারী ও শিশু ধর্ষণের রাস টানতে ইতোমধ্যে সরকার ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত করে আইন করেছে।
ধর্ষণ ও ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম
শিরক ও হত্যার পর ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা আল ইসরা, আয়াত : ৩২)
প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, “উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘ব্যভিচার করো না’-এর চেয়ে ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না’ এটি অনেক বেশি কঠোর কথা।” এর সহজ অর্থ হলো, যেসব বিষয় ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করে ও ভূমিকা রাখে সেগুলোও হারাম।
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি
ধর্ষণের শাস্তির ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিষয়টির স্পর্শকাতরতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে এক নারীকে ধর্ষণ করা হলে রাসুল (সা.) ধর্ষককে হদের শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৯৮)
উল্লেখ্য, যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কোরআন-হাদিসে সুনির্ধারিত রয়েছে, সেগুলোকে হদ বলে।
ধর্ষিতার করণীয়
ধর্ষণ ব্যভিচারের সমগোত্রীয় হলেও তার চেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। ব্যভিচারের পাশাপাশি ধর্ষণও কবিরা গুনাহ। কোনো ব্যক্তি যদি ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে তার সর্বপ্রথম করণীয় হলো, সম্ভব হলে তা প্রতিরোধ করা। এমনকি যদিও তা ধর্ষণকারীকে হত্যা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে, তাতেও ইসলাম সায় দিয়েছে।
সাইদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহীদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহীদ। দীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২, তিরমিজি, হাদিস : ১৪২১)
ব্যভিচারের শাস্তি
বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে আমৃত্যু পাথর নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শরিয়তে ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তার শাস্তি রজম বা পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী; তাদের প্রত্যেককে ১০০ কশাঘাত করবে…।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২)
এই শাস্তি প্রয়োগের অধিকার একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসনের। অন্য কারও এখানে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। হাদিসে এসেছে, ‘ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি আখিরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো
১. চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া, ২. দরিদ্রতা, ৩. অকালমৃত্যু। আর আখিরাতের তিনটি হলো ১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি, ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা ও ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই. ফা. পৃষ্ঠা : ১০৯)
ইসলামে ধর্ষক ব্যভিচারী ও নির্যাতক
ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্যপক্ষ নির্যাতিত। তাই অত্যাচারী ধর্ষকের শাস্তি হবে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় অবধারিতভাবে সংঘটিত হয়। এক. ব্যভিচার। দুই. বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন। প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি বরাদ্দ।
মোটকথা, হাঙ্গামা ও ত্রাস সৃষ্টির অপরাধের শাস্তি ত্রাস ও হাঙ্গামাহীন অপরাধের শাস্তি থেকে গুরুতর। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত ষোলো বৎসরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোলো বৎসরের কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌনসঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।’
সম্মতি ছাড়া বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ইসলাম ও দেশীয় আইন এবং সাধারণের কাছে অপরাধ হিসেবে গণ্য। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু না হলে তার মৃত্যুদণ্ড নেই। কেবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড রয়েছে। পক্ষান্তরে ইসলামে বিবাহিত কেউ ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে যে শাস্তি
আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ইসলামে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে, প্রথমে ধর্ষক ব্যভিচারের শাস্তি পাওয়ার হত্যার শাস্তি পাবে। যদি অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়, তাহলে ‘কিসাস’ বা মৃত্যুদণ্ড। আর যদি এমন কিছু দিয়ে হয়, সাধারণত যা দিয়ে হত্যা করা যায় না; তাহলে অর্থদণ্ড। যার পরিমাণ একশ উটের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (প্রায় কোটি টাকা)।
ধর্ষণের সঙ্গে যদি আরও কোনো অপরাধ ঘটে, যেমন অশ্লীল ভিডিও ধারণ করা ও ওই ধরনের ভিডিও প্রচার করা ইত্যাদি। যদি এসব অপরাধ পাওয়া যায়, তাহলে শাস্তির পরিমাণ আরও বেশি হবে।
সব শেষে একটি বিষয় স্মরণ রাখা জরুরি। সমাজ থেকে ব্যভিচার ও ধর্ষণ সমূলে নির্মূল শুধু দণ্ডবিধি ও আইনের কঠোরতার মাধ্যমে সম্ভব না-ও হতে পারে। দণ্ডবিধি ব্যভিচার ও ধর্ষণ উপশমের একটি উপায়। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি, খোদাভীতি ও তাকওয়াভিত্তিক সমাজ।