এক মেয়াদেই তৃতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে এক মেয়াদেই তৃতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মেয়র তাহ্সীন বাহার সূচনা পলাতক থাকায় এই আলোচনা চলছে।
সূত্র জানায়,২০২২ সালের ৫ জুলাই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি মারা গেলে পদটি শূন্য হয়। ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল উপনির্বাচনে তাহ্সীন বাহার সূচনা বিজয়ী হন।
একটি অসমর্থিত সূত্রের দাবি, মেয়র সূচনা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সেনা হেফাজতে রয়েছেন। এদিকে একই সময়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এমপি বাহারপন্থী অন্তত ২০ জন কাউন্সিলর, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোসহ বিভিন্নভাবে আক্রমণ ও হয়রানি করেছেন, তারা পলাতক রয়েছেন। এ অবস্থায় প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের আর্থিক সেবা, যেখানে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, ওইসব সেবা একেবারে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে মেয়রের অনুপস্থিতির কারণে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। ঠিক কবে নাগাদ মেয়র আসবেন সে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন তারা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর সরাসরি হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন মেয়র সূচনা। বাহার ও সূচনার অনুসারীদের আক্রমণে কুমিল্লায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছেন। এ অবস্থায় হত্যাসহ একাধিক ফৌজদারী মামলার কবলে পড়তে পারেন সূচনা।
স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ থেকে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের মেয়র টানা তিন সভা অনুপস্থিত থাকলে এবং সিটি করপোরেশনের দুই-তৃতীয়াংশ কাউন্সিলর অনাস্থা জ্ঞাপন করলে ওই সিটি মেয়রের পদ শূন্য হয়ে যায়। সিটি করপোরেশনের মেয়র মারা গেলে বা সে¦চ্ছায় পদত্যাগ করলেও পদটি শূন্য হয়। এছাড়া কোনো মামলায় মেয়র গ্রেপ্তার বা ওয়ারেন্ট জারি হলেও ওই পদে মেয়রের আর বৈধতা থাকে না। আইন অনুযায়ী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদটি আবারও শূন্য হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মেয়র ছাড়াও কাউন্সিলদের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, মেয়র ও কাউন্সিলররা পলাতক থাকলে একটি সিটি করপোরেশন কার্যত অচল হয়ে যায়। এখানে সবধরনের নাগরিক সেবাতে বিপর্যয় ঘটে। কুমিল্লা নগরীর অবস্থাও একই রকম। নাগরিক সেবা দ্রুত স্বাভাবিক করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুন নাহার জানান, মেয়র কোথায় আছেন তা আমরা বলতে পারছি না। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের আর্থিক পরিষেবাগুলো আটকে গেছে। কাউন্সিলররাও অফিস করছেন না। অন্যান্য স্টাফ দিয়ে সিটি করপোরেশন আপাতত চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমরা বৈঠক করছি। বৈঠক শেষে সিটি করপোরেশন বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৫ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। ওই নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আরফানুল হক রিফাত মারা যান। এরপর পদটি শূন্য হলে ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে তাহ্সীন বাহার সূচনা বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে বিজয়ী করেছেন এমপি বাহার, এমন অভিযোগ করেন বাকি দুই প্রার্থী। চলতি মেয়াদের আরও প্রায় তিন বছর বাকি রয়েছে। মেয়রের পদটি শূন্য হয়ে গেলে এখানে একই মেয়াদে তৃতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।