কুমিল্লা নগরীতে দুইশত বছরের ধোপা পল্লী

 

inside post

আবু সুফিয়ান রাসেল।।

নগরীর পুরাতন চৌধুরীপাড়া। গোমতীর কোল ঘেঁষে শুরু হয়েছিলো ধোপা পরিবারের বসবাস। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধোপা পেশাকে ধরে রেখেছেন তিন-চার প্রজন্ম। প্রায় দুইশত বছর টিকে থাকা এ পেশা এখনও আপন ঐতিহ্যে চলছে কাঠের কয়লা আর পিতলের ইস্ত্রিতে। তবে কাঠের কয়লার মেশিন এখন বিলুপ্তির পথে।

কাপ্তান বাজার এলাকার মো. শাহিন মনে করেন, আদালত সংলগ্ন ডেলনি হাউজে জমিদারদের বসবাস ছিলো। মোগলটুলি ফারুকী হাউজে নওয়াব স্যার কে.জি.এম. ফারুকী থাকতেন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী এলাকার জমিদাররা কুমিল্লা শহরমুখী ছিলেন। তাদের প্রয়োজনে তারা ধোপা, নাপিত, জেলে, কামারদের থাকা ও কাজের ব্যবস্থা করে দিতেন। ধোপার কাজ করার জন্য প্রচুর পানির দরকার। গোমতী নদীর পানিতে তার ধোয়ার কাজটি করতেন। তাই গোমতী পাড় পুরাতন চৌধুরীপাড়ায় তাদের বসবাস। যুগের পর যুগ এখানে এ পেশা টিকে থাকার কারণ এটি আবাসিক এলাকা।

প্রায় পাঁচ দশক এ পেশায় আছেন শ্যামলা রানী দাস। এ নারী বাসা থেকেই কাজ করেন। তিনি জানান, এ পেশায় দেশ স্বাধীনের পর থেকে আছি। আমার স্বামী বালু লাল দাস, শ্বশুর চন্দ্র লাল দাস, দাদা শ্বশুরও এ পেশায় ছিলেন। এখন আমার ছেলে শিমুল চন্দ্র দাস একই পেশায় আছে। আমি যে কয়লার আয়রন মেশিনটা ব্যবহার করি এটি শ্বশুরের। করাচি থেকে আনা হয়েছে, যা ডাবল সিংহ মার্কা পিতলের মেশিন। এটি এখন পাওয়া যায় না। চট্টগ্রাম থেকে পিতলের আয়রন মেশিন পাওয়া যায় বেশী দিনে টিকে না।

 

মোকেশ চন্দ্র দাস জানান, ছোটকাল থেকেই এ পেশায় জড়িত। আমার বড় ভাই সন্তুশ চন্দ্র দাসও এ কাজ করেন। বাবা বুলবুল চন্দ্র দাস, দাদা গৌবিন্দ্র চন্দ্র দাসও এ পেশায় ছিলেন। আগের মতো চাহিদা নেই, ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি আছে। এখন দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়। কাপড় ধৌতর কাজ তেমন আসে না, শুধু ইস্ত্রির কাজ। এ টাকায় পরিবার চালাতে কষ্ট হয়।
মদন চন্দ্র দাস জানান, দাদা জানু লাল ধুপী ও পিতা বিহারী লাল দাস এ পেশায় ছিলেন। তবে আমার ছেলে-মেয়েরা পড়া লেখা করে, তারা এ পেশায় থাকবে না।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগে প্রধান নূর মোহাম্মদ হারেছী মনে করেন, একটি পেশা টিকে থাকে সমাজের চাহিদার উপর। পূর্বে ধোপা পেশায় যারা ছিলেন বেশীর ভাগই সনাতন ধর্মলম্বী। তারা পূর্ব পুরুষদের কাজকে ধরে রাখা ঐতিহ্য বা পূণ্য মনে করেন। আবার যুগ উপযুগী শিক্ষা বা দক্ষতা না থাকার ফলেও অনেকে বংশপরম্পরায় একই পেশায় থেকে যান। এছাড়া অন্য কারণও থাকতে পারে।

সমাজ সেবা অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক জেডএম মিজানুর রহমান জানান, ধোপা, কামার, তাঁতি, জেলে এ জাতীয় পেশায় যারা আছেন তাদের জন্য সরকারি ভাবে বিশেষ কোন ভাতা নেই। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা দলিত সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।

 

 

আরো পড়ুন