কোমল পানীয় নামক বিষ খাচ্ছেন আপনি

আমোদ ডেস্ক।।

inside post

প্রতিদিন মানুষ খেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এনার্জি ড্রিংকস। নানা রকম প্রলোভন আর চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপনের হুজুগে এগুলো বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে।

কিন্তু কী আছে এসব পানীয়ে, আর মানবদেহের ওপর এর প্রভাবটাই-বা কেমন তা নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে তেমন কিছু জানার আগ্রহও নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে কোমল পানীয়ে রয়েছে ইথিলিন গ্লাইকল, কৃত্রিম রঙ, ফসফরিক এসিড, বেশি মাত্রার ক্যাফেইন, ঘনচিনি, অপিয়েট ও সিলডেনাফিল সাইট্রেট-এর মতো ক্ষতিকর উপাদান। যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে গত কয়েক দশকে সব বয়সী বিশেষত শিশুদের মধ্যে কিডনি রোগ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই কোমল পানীয়। এনার্জি ড্রিংকস পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনশক্তি হ্রাস, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আর নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ও দুর্বল শিশু জন্ম দেয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এসব পানীয় দীর্ঘদিন পান করলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী নারীর সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। রুচি নষ্ট ও মেজাজ হয়ে উঠতে পারে খিটখিটে। উপরন্তু, শিশুদের জন্যে এগুলো খুবই ক্ষতিকর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এসব পানীয়ের নেশাকে আরো বড় নেশার জগতে প্রবেশের জন্যে ‘ওয়েটিং রুম’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সিলডেনাফিল সাইট্রেট মেশানো পানীয় পর্যায়ক্রমে পুরুষত্ব নষ্ট করে ফেলবে। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে লিভার ও কিডনি।

* কোমল পানীয় হৃদরোগ ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

* কোমল পানীয়ে ইথিলিন গ্লারাইকোল নামের রাসায়নিক উপাদানটি আর্সেনিকের মতোই বিষ। এতে কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

* নারীদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত চা বা কফির মতোই কোমল পানীয় গর্ভধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

* কোমল পানীয়তে এক ধরণের মিষ্টি জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যা মানুষের শরীরে থাকা স্বাভাবিক প্রজননের গুণগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে।

* নিয়মিত কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়ার পাশাপাশি নানাবিধ শারীরিক সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

* প্রতিদিন কোমল পানীয় গ্রহণের ফলে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হওয়াটা নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

* দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমায় কোমল পানীয়, যে কারণে ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ে। ক্যারামেলের রঙ আনার জন্য কোমল পানীয়ে পলি-ইথিলিন গ্লারাইকোল নামে যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

* কোমল পানীয়ের তাৎক্ষণিক বিপদ হচ্ছে গলা বা শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি। এছাড়া টনসিলাইটস, ফেরিংজাইটিস, ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসজনিত রোগ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

* হৃদরোগ, দাঁতের ক্ষয়, হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয়, আসক্তি তৈরি, বদহজম, অকাল বার্ধক্য ছাড়াও অত্যধিক ক্যাফেইনের কারণে অ্যাড্রিনাল রোগ ইত্যাদি হয়ে থাকে।

অপিয়েট ও সিলডেনাফিল নামের এ দুটি রাসায়নিক উপাদান ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিষিদ্ধ। কারণ, সিলডেনাফিল সাইট্রেট ধীরে ধীরে যৌনশক্তি নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। আর অপিয়েট ও অতিরিক্ত ক্যাফেইন মানুষকে ধীরে ধীরে কড়া নেশার জগতে ধাবিত করে। এসব তথ্যের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক এ ধরনের পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন