গুলি চালানোর উস্কানিদাতা সাংবাদিক ও সিটি মেয়রের সেই কথা

 
অফিস রিপোর্টার।।
দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে গণমাধ্যম কর্মীরাই সবার আগে ছুটে যান। পেশাগত ও বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই এমনটি করতে হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক উত্তাল সময়েও বসে থাকার সুযোগ নেই তাদের। জীবনের ঝুঁকি জেনেও পিছপা হওয়া যায় না। তবে দানবদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে গিয়ে অনেকে ভুলে যান অন্যের জীবনের কথা। এতেই ঘটে যতো বিপত্তি।  গত ১৮ জুলাই কুমিল্লার কোটবাড়ী বিশ্বরোড এলাকায় এক সাংবাদিক তৎকালীন সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা, জেলা প্রশাসক মু. মুশফিকুর রহমান ও পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলামকে বলেন কুবিতে আন্দোলনকারীরা জামায়াত শিবিরের লোক। তাই তাদের গুলি করলে সমস্যা হবে ন। ওই সাংবাদিক একটি টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি। সেখানে অবস্থানরত এক জুনিয়র সাংবাদিক জানান, ওই সাংবাদিকের বক্তব্য শুনে তৎকালীন সিটি মেয়র সূচনা শিক্ষার্থীদের ওপর কেন গুলি করা হলো না, পুলিশ সুপারের কাছে সে কৈফিয়ত জানতে চান। বলেন এই আন্দোলনে চিহ্নিত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারপরও কেন গুলি করা হলো না, তা বোধগম্য নয়। অবশ্য তার কথায় তাৎক্ষণিক আপত্তি তুলেছিলেন পুলিশ সুপার। তিনি সূচনাকে জানান, এ আন্দোলন কারা চালাচ্ছে, সেটি আমরাও জানি। তারপরও তারাতো আর দলীয় ব্যানারে আসেনি। গুলিতে দু-একজন সাধারণ শিক্ষার্থী মারা গেলো তো তা ভিন্ন মোড় নেবে। অবশ্য পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের ওপর ঠিকই গুলি চালিয়েছে পুলিশ। শুধু তাই নয় আন্দোলন ঠেকাতে প্রকাশ্যে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে মাঠে ছিলো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন সাংবাদিক জানান, তৎকালীন এমপি বাহারের অনুগত কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর মধ্যে একটি জাতীয় দৈনিকের এক সাংবাদিক ছিলেন। সূত্র জানায়, তিনি এমপির দাপট দেখিয়ে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে অনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়েছেন। নিজের কব্জায় নিয়েছেন প্রেসক্লাব কমিউনিটি সেন্টার। বাগিয়ে নিয়েছেন সরকারি বিভিন্ন টেন্ডার। ভিন্ন মতের অনেক সাংবাদিককে করেছেন শারীরিক নির্যাতন। যাকে-তাকে জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করেছেন। সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি। সূত্র জানায়, গত ৩ আগস্ট আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় তাকে অস্ত্রসহ হাতে-নাতে ধরে উত্তম-মধ্যম দেয় শিক্ষার্থীরা। আরেক সাংবাদিকও সাংবাদিকতার চেয়ে বাহারম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ রয়েছে। এক ফটো সাংবাদিকও প্রকাশ্যে বাহার-সূচনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় ছিলেন। তিনি পেশাদার অন্যান্য সাংবাদিকের কাজে প্রতিবন্ধকতা করতেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট কুমিল্লা পুলিশ লাইন এলাকায় শিক্ষর্থীদের ওপর গুলিবর্ষণের ছবি তুলতে চাইলে অন্যান্য কয়েকজন সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন সাংবাদিক। কুমিল্লার একাধিক সাংবাদিক আক্ষেপ করে বলেন গত এক যুগেরও বেশি সময় এসব অপসাংবাদিকের কারণে অনেক পেশাদার ও ক্লিন ইমেজের সাংবাদিকও ছিলেন অসহায়। অপমানিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই মুখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি।