নগরীতে গোমতীর বালুর উত্তাপ

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার গোমতী নদীর বালু মহাল নিয়ে দুইটি পক্ষ বিবাদে জড়িয়েছে। তারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। নগরীতে আলোচনা রয়েছে, বালু মহাল নিয়ে মূলত নগরীর বিবদমান দুইটি রাজনৈতিক পক্ষের বিরোধ পুনরায় জেগে উঠেছে। নগরীর অস্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিরোধে এখই প্রশাসনকে ভূমিকা রাখার আহবান সচেতন নাগরিকদের।
সূত্রমতে,মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে মেসার্স এম.রহমান নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমান গোমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেসার্স রিফাত কনস্ট্রাকশনের মালিক ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর আরফানুল হক রিফাতের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযোগ করেছিলেন মেসার্স এম.রহমান নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমান।
আরফানুল হক রিফাত বলেন, মেসার্স এম.রহমান নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমান যেই টাকায় ইজারা নিয়েছেন, তার কোন আয়কর দেওয়া হয়ানি। তার এই টাকার উৎস কোথায় এটি খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তার ট্রেড লাইসেন্স হালনাগাদ নেই। পাশাপাশি তিনি প্রতিটি পদে পদে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। অবৈধভাবে পাঁচটি ঘাট (বালুমহাল) ইজারা নিয়ে তিনি মোট ২৯টি ঘাট দখল করেছেন। এখন বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের দিয়ে এসব ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করছেন। উল্টো সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন এবং এই বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র সৈয়দ মো. সোহেল, পাঁচথুবী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.রাজু প্রমুখ।
মেসার্স এম.রহমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের দেওয়া সকল নির্দেশনা মেনেই বালুমহালের ইজারা নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার সবকিছুই মিথ্যা ও বানোয়াট। উল্টো তিনি আমাকে হয়রানি করছেন। আমার ইজারা নেওয়া বালুমহাল তিনি দখলে রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো.মাঈন উদ্দিন বলেন, যেহেতু এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, তাই আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না। উচ্চ আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদার মাহাবুবুর রহমান বলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন গোমতী নদীর বালু মহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে মাহাবুবুর রহমানের মেসার্স এম. রহমানসহ মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। এতে এক কোটি ৫০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় মেসার্স এম. রহমান প্রতিষ্ঠানটি নদীর পাঁচটি বালু মহালের ইজারা পায়। জেলা প্রশাসন সাইনবোর্ড টানিয়ে মেসার্স এম. রহমান প্রতিষ্ঠানকে পাঁচটি বালু মহালের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর আগের ইজারাদার মেসার্স রিফাত কনস্ট্রাকশনের লোকজন নদীর অন্তত ১৩টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতিপূর্বে প্রশাসন থেকে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার সরঞ্জামাদি ভেঙ্গে ফেলা হলেও পুনরায় বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এতে নদীর বাঁধ ও ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি এসব বালু ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি বাজেয়াপ্ত করাসহ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বাবুল, আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন, মাসুদুর রহমান, মোশারফ হোসেন শামীম, রাশেদ মিনহাজ, জাহেদুল আলম, আলী আক্কাছ, মো. সেলিম, শাহরিয়ার মাহমুদ ও মনিরুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।
অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স রিফাত কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী আরফানুল হক রিফাত বলেন,করোনার কারণে আগে তোলা বালু বিক্রি করতে পারেননি। সেগুলো এখন বিক্রি করছেন। নদী থেকে তিনি নতুন করে কোনো বালু তুলছেন না। তার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ মিথ্যা।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.আবুল ফজল মীর বলেন, আমরা ইজারাদার মাহবুবুর রহমানকে তার ইজারার স্থানসমূহ বুঝিয়ে দিয়েছি। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো।

inside post
আরো পড়ুন