ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মাদক ব্যবসায়ীরা
প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ- ভারতের সীমান্তবর্তী উপজেলা কুমিল্লার বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া। এই দুই উপজেলায় ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানায়, কুমিল্লার সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলা রয়েছে। তার মধ্যে বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক কারবারীর উৎপাত বেশি। এই দুই উপজেলার দুই রাজনৈতিক নেতা ও ব্রাহ্মণপাড়া থানার সাবেক এক ওসি মাদক কারবারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় উল্লেখ করা হয়। এই নিয়ে দুই উপজেলার প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। আলোচনায় আসে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ। এতে পাশের উপজেলা বুড়িচংয়ের মাদক কারবারীরাও পিছু হটে। সম্প্রতি তারা প্রশাসনের মাদক বিরোধী অভিযানে বিভিন্ন উপায়ে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, মাদকের উৎস বন্ধ করতে সীমান্তে ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এজন্য সীমান্তের ১১৭ টি মাদক ও চোরাচালান পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়। ইউনিয়ন মাদক প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে এবং পুরাতন রেকর্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উপজেলার ৩৪৮ ব্যবসায়ীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হয়।
সাবেক এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, ধরা পড়ে পেশা পরিবর্তন করে বর্তমানে একটি ইট ভাটায় কাজ করছি। তার মতো অনেকেই এখন পেশা বদল করে অটো চালিয়ে, কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া ঘুরে জানা যায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এখন বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক কারবারীদের সংখ্যা ফের বাড়ছে। কয়েক মাস আগে মাদকের রিপোর্ট করতে গিয়ে বুড়িচং উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মহিউদ্দিন নামে এক সাংবাদিককে গুলিতে হত্যা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনার কারণে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষোদগার করছেন মাদকে সংশ্লিষ্ট নেতারা।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আবু জাহের বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচংয়ের কিছু নেতা মাদক কারবারে জড়িত। সম্প্রতি ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলা প্রশাসন বেশ কিছু মাদকবিরোধী অভিযান করেন। এতে বিভিন্ন উসিলা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা বিষোদগার শুরু করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আমির হোসেন জোবেদা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে। এতে কিছু বিপদগামী নেতা বিষোদগার শুরু করেছে। এতে মাদক ব্যবসায়ীরা আবারো বেপোরোয়া হয়ে উঠবে।
চান্দলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, শশীদল ইউপি চেয়ারম্যান ও মাদক প্রতিরোধ কমিটির আরেক সভাপতি আতিকুর রহমান রিয়াদ বলেন, মাদক প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতায় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে জমা দেই। বর্তমানে তাদের কেউ আর সক্রিয় নেই। প্রশাসনের তৎপরতায় থানা পুলিশ এবং বিজিবিও এখন বেশ সক্রিয়।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, ইউএনওরা সাধারণত এসব অভিযান চালান না, তবে আমাদের ইউএনও এটি করেন। মাদকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সেটি নজিরবিহীন। এই উন্নয়নের পথে অন্যতম এক বাধা হলো মাদক। মাদক একদিকে যেমন কর্মঠ মানুষকে কর্ম অক্ষম বানিয়ে তোলে, অপরদিকে নানা ধরণের অপরাধ বাড়িয়ে দেয়। ব্রাহ্মণপাড়ায় যোগদানের পর থেকেই মাদকের এই ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করেছি। আমাকে থানা পুলিশ, বিজিবি ও জনপ্রতিনিধিরা সর্বোতভাবে সহায়তা করেছেন। এখন পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো।