বন্ধের পথে কুমিল্লা অঞ্চলের দুই রেল রুট
বন্ধ ১৫ স্টেশন,কমেছে সাত জোড়া ট্রেন
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
ধুঁকছে লাকসাম-নোয়াখালী ও লাকসাম- চাঁদপুর রেল রুট। স্টেশন বন্ধ ও ট্রেন কমে যাওয়ায় রুট দুইটি অনেকটা বন্ধের পথে রয়েছে। কুমিল্লা অঞ্চলে গত দেড় দশকে ১৫টি রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে দুই রুটে কমেছে সাত জোড়া ট্রেন। বেহাল অবস্থা লাকসাম-নোয়াখালী রেল রুটের। এই রুটে নিয়মিত মাত্র এক জোড়া ট্রেন চলে। ট্রেন ও যাত্রী কমায় স্টেশন সংলগ্ন ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার যাত্রীরা।
স্টেশন গুলো হচ্ছে, লাকসাম-নোয়াখালী রেল রুটের দৌলতগঞ্জ,খিলা, বিপুলাসার,বজরা ও মাইজদী। লাকসাম-চট্টগ্রাম রেল রুটের নাওটি। লাকসাম-আখাউড়া রেল রুটের আলীশ্বর, ময়নামতি। লাকসাম-চাঁদপুর রেল রুটের চিতোষী, শাহরাস্তি,উয়ারুক,বলাখাল,মধুরোডে,শাহতলী ও মৈশাদী।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা রেল স্টেশন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- স্টেশনটি দেড় দশক ধরে বন্ধ। সেখানে স্টেশনের প্লাটফর্মে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মালামাল রেখেছেন। অন্যপাশে জুয়া খেলায় ব্যস্ত লোকজন। কোথাও গরু- ছাগল বাঁধা হচ্ছে। কোথাও ধান শুকানো হচ্ছে। স্টাফ কোয়ার্টার ভেঙে পড়ে আছে। এটা যেন পরিত্যক্ত বাড়ি। প্ল্যাটফর্মের দুই পাশে রেলওয়ে থেকে ভাড়া নেয়া দুই দোকান রয়েছে। এখানের দোকান গুলো কাস্টমার শূন্য। এখানে রেলওয়ের কোন স্টাফকে পাওয়া যায়নি। দোকানি কামাল হোসেনকে দেখা গেল প্ল্যাটফর্ম ঝাড়– দিতে।
দোকানি কামাল হোসেন বলেন, এই স্টেশন অনেক জমজমাট ছিলো। এখানে গাড়ি কমে গেছে। স্টেশনও বন্ধ। এখানে দুই দিন পর একটি ট্রেন থামে। যাত্রী কমে যাওয়ায় আমরা কষ্টে আছি। রেলওয়ের ভাড়া দিয়ে কোন রকমে টিকে আছে। প্রতিদিন ট্রেন থামলে আমাদের আয় বাড়বে।
পাশের খিলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন,খিলা একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন। এটি বন্ধ থাকায় বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
এদিকে লাকসামের দৌলতগঞ্জ রেল স্টেশনটির অফিস ঘর ছাড়া পাশের জায়গা দখল হয়ে গেছে। কোথাও মাছের আড়ৎ,কোথাও হকার মার্কেট করা হয়েছে। এখানে ট্রেন ক্রসিংয়ের লাইনটিও দখল হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্ধ স্টেশনের কয়েকটির প্লাটফর্মের মধ্যে এখন ধান মাড়াই ও গরু বাধা হচ্ছে। কোথাও রেল লাইনের ওপর বাজার বসছে। কোথাও রেলওয়ের সম্পত্তি দখল হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে লাকসাম-চাঁদপুর রেল রুটের দেড় দশকে তিন জোড়া ট্রেন কমেছে। এখন দুই জোড়া ট্রেন চলে। সাগরিকা ও মেঘনা। লাকসাম-নোয়াখালী রেল সড়কের অবস্থা বেশি বেহাল। এই রুটে চার জোড়া ট্রেন বন্ধ হয়েছে। এক জোড়া ট্রেন চলে উপকূল। দুই দিন বিরতিতে চলে সমতট এক্সপ্রেস।
নোয়াখালী মাইজদী এলাকার যাত্রী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন,ট্রেন নিরাপদ বাহন। স্টেশন গুলো চালু ও ট্রেন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদপুরের গণমাধ্যম কর্মী মনোয়ার কানন বলেন, লাকসাম-চাঁদপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল রুট। স্টেশন গুলো চালু ও সেবার মান বাড়লে যাত্রীর সংকট হবে না।
রেলওয়ে কুমিল্লার উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন,স্টেশন মাস্টার ও জনবল সংকটের কারণে স্টেশন গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। স্টেশন মাস্টার নিয়োগ হলে স্টেশন গুলো পুনরায় চালু হবে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
ট্রেন বাড়ানো এবং বন্ধ স্টেশন চালুর বিষয়ে রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এই সব সিদ্ধান্ত রেল ভবন নেয়। আমরা শুধু বাস্তবায়ন করি।