শাহ্ সুজা মসজিদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবি
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
শাহ্ সুজা মসজিদ। মোগল স্থাপত্যের অপূর্ব নির্দশন। ১৬৫৮ সালে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। পৌনে চারশ‘ বছরের প্রাচীন এ মসজিদটি দেখতে কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলী এলাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসেন। প্রত্ন পর্যটন বিকাশে এটির সংরক্ষণ জরুরি বলে মন্তব্য সুধীজনদের।
কুমিল্লার শাহ্ সুজা মসজিদটির নির্মাণ ইতিহাস সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ শ্রী কৈলাশ চন্দ্র সিংহ তাঁর রামমালা গ্রন্থে উল্লেখ করেন, গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলীতে সুজা মসজিদ নামক একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ অদ্যাপি দৃষ্ট হইয়া থাকে। এই মসজিদ সমন্ধে দুই প্রকার প্রবাদ শ্রুত হওয়া যায়। একটি হচ্ছে- সুজা ত্রিপুরা জয় করিয়া বৃত্তান্ত চিরস্মরণীয় করিবার জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। এছাড়া মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য সুজার নাম চিরস্মরণীয় করিবার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করিয়া এই মসজিদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় প্রবাদ অপেক্ষা প্রথমোক্ত প্রবাদ সত্য বলিয়া আমাদের বিশ্বাস হইতেছে।’ শাহ্ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০) বাংলার সুবাহ্দার ছিলেন। শাহ্ সুজা ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। আয়তনের দিক দিয়ে এ মসজিদ খুব বেশী বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। মসজিদটি দেখতে জুমা, শবে বরাত,শবে কদরসহ বিশেষ দিন গুলোতে মুসল্লি ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়।
সূত্রমতে,মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ থেকে আকারে বড়। আদি মাপ ছিল প্রস্থে ১৬ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ৪৭ ফুট। সাম্প্রতিকালে মসজিদের দুই প্রান্তে ২২ ফুট করে দুটি কক্ষ এবং সম্মুখ ভাগে ২৪ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা নির্মাণ করায় আদি রূপ কিছুটা নষ্ট হয়েছে। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি সুউচ্চ মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের চার কোনে ৪টি অষ্ট কোনাকার মিনার। এগুলি মসজিদের ছাদের অনেক উপরে উঠে গেছে। ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক ও পদ্ম নকশায় অলঙ্কৃত মসজিদের প্রবেশপথ। কেবলা প্রাচীর ও গম্বুজ, কলসী চূড়া দ্বারা সুশোভিত। আশ-পাশে বড় ভবন গড়ে উঠায় মসজিদটির সৌন্দর্য ঢাকা পড়ছে। এখন ১২শ‘র উপরে মুসল্লি একসাথে নামাজ পড়তে পারে।
লাকসামের উজানিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান,তিনি মসজিদটির ঐতিহ্য সম্পর্কে শুনেছেন। তাই কুমিল্লায় এসে মসজিদটি দেখেছেন। এখানে নামাজ পড়ে তিনি তৃপ্তি পেয়েছেন।
শাহ্ সুজা মসজিদ সংলগ্ন শাহ্ সুজা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ মাসুদ জানান,এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। শুধু কুমিল্লায় নয় সারা দেশের মধ্যে অন্যতম একটি মসজিদ। এটির অপরিকল্পিত সংস্কারে কিছু সৌন্দর্য বিলুপ্ত হয়েছে। শাহ সুজা মসজিদসহ দেশের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ.মন্দির ও স্থাপনার পরিচালনা কমিটিতে প্রত্ন জ্ঞান সম্পন্ন লোক রাখা প্রয়োজন। সংস্কারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। শাহ সুজা মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষায় এটিকে প্রপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর করা জরুরি।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, শাহ সুজা মসজিদটি পরিদর্শন করেছি। প্রত্ন পর্যটন বিকাশে এটির সংরক্ষণ জরুরি। আমরা মসজিদটির সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছি।