আল্লামা ওবাইদুল হক নঈমী ; আমাদের চেতনার বাতিঘর
আরো পড়ুন:
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
মানব জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যটি মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন এভাবে, অর্থাৎ” প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” ( আল কোরআন, সূরা আম্বিয়াঃ৩৫) মানুষ জম্মগ্রহণ করার পর কম- বেশী কিছুকাল বেঁচে থাকার পর মারা যায়। মৃত্যুর পর তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম শুধু আলেমগণ, যে আলেম উপকারী ইলম প্রচার করে মৃত্যুবরণ করেন তিনি মারা গেলেও পরবর্তী প্রজম্ম তার ইলম থেকে উপকৃত হয় এবং নেকী পেতে থাকেন, এখলাসের সঙ্গে সেই কাজ করলে নেকী বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ” মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে, তিনটি উৎস যদি কেউ জীবিতাবস্থায় সৃষ্টি করে যেতে পারেন তবে সেই উৎস থেকে মৃত্যুর পরও পুণ্যপ্রাপ্তি অব্যাহত থাকে। আর তা হচ্ছে ( ১) সাদকায়ে জারিয়া, (২) উপকারী ইলম, (৩) নেক সন্তান ( যে তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে।”( মুসলিম শরীফ)
সারাটি জীবন মানুষের মাঝে উপকারী ইলম প্রচার ও বিতরণ করে গত কিছুদিন পূর্বে মাওলা পাকের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন! আহ! তিনি চলেই গেলেন!! না ফেরার দেশে। এমন এক দেশে যেখানে একবার কেউ গেলে আর ফিরে আসে না কোনদিন। তিনি চলেই গেলেন পরম করুণাময়ের একান্ত সান্নিধ্যে। ক্ষণস্থায়ী এ জগতে আসা – যাওয়া এ তো এক চিরন্তন ও শাশ্বত রীতি। “জম্মিলে মরিতে হইবে, অমর কে কোথায় কবে ” কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। এমন কিছু মহামানবের আবির্ভাব এ পৃথিবীতে ঘটে, যাদের পরিণত বয়সে স্বাভাবিক চলে যাওয়াটাও অনেক সময় অস্বাভাবিকই মনে হয়। স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে নিদারুণ কষ্ট লাগে। মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ তাঁদেরই একজন নিঃসন্দেহে। কারণ, তিনি ছিলেন শরীয়ত, তরীকত ও সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠার আলোকবর্তিকা। যার দর্শন গৌরবের, সান্নিধ্য লাভ সৌভাগ্যের। এই বিশালায়তন ও বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লেখার মত যোগ্যতা আমার নেই। কারণ, বহুমুখী কর্ম ও যোগ্যতায় তিনি যে উচ্চতায় পৌছেছেন, সে স্থানে আমার পৌছানো শত জীবনেও সম্ভব নয়। তিনি তাঁর জীবনে যে বিশাল ও বহুমুখী কর্ম সম্পাদন করেছেন। আমার মত নগন্য মানুষের পক্ষে সমগ্র জীবনের শ্রম- সাধনা এক করেও তাঁর এক শতাংশ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ ছিলেন আমাদের ” চেতনার বাতিঘর”। সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠার মূলধারার অগ্রপথিক। এই মহান মনীষী সম্পর্কে লেখার যোগ্যতা আমার নেই সত্য ; তবু, আবেগ আর দায়বদ্ধতা থেকে শুধু চেষ্টা।
আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞায়, মনীষা ও অভিজ্ঞতায় আমাদের জাতীয় ইতিহাসে যাঁরা কিংবদন্তির আসন অলংকৃত করে আছেন; মাওলানা আকরম খাঁ, ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বিশেষ করে সুন্নিয়তের আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র আল্লামা গাজী আজিজুল হক শেরে বাংলা ( রহঃ), মুফতি ওকার উদ্দিন বেরলভী ( রহঃ) , ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী ( রহঃ), অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দীন আলকাদরী( রহঃ) প্রমুখদের – তিনি ছিলেন প্রতিচ্ছবি । তাঁদেরই স্বার্থক উত্তরসূরি। আমাদের মত নগন্যদের পক্ষে তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন দুঃসাধ্য প্রয়াস বৈ অন্য কিছু নয়। একজন শেরে মিল্লাত ওবাইদুল হক নঈমীর জম্ম প্রতিদিন হয় না৷ সপ্তাহ, মাস নয় প্রতি যুগেও নয়। শতাব্দী জুড়ে হয়তো জম্ম হয় দু’ একজন শেরে মিল্লাত ওবাইদুল হক নঈমীর। তিনি ছিলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভাধর এক বিরল আলেমে দ্বীন। তাঁর জীবন ছিল বহু বর্ণে বর্ণময়। বহুরুপে রুপময়। বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছিল তাঁর জীবন। তিনি ছিলেন বৈচিত্র্যের মাঝে মানিয়ে চলা এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন, একাধারে বিজ্ঞ শায়খুল হাদিস, আলেম, বিদগ্ধ লেখক, অনলবর্ষী বক্তা, সুবিজ্ঞ অনুবাদক, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক, সুন্নী ঐক্যের প্রতীক, নবী- অলি এবং দেশপ্রেমিক বীর মুজাহিদ। তাঁর হৃদয়জুড়ে ছিল মক্কা- মদীনার প্রেম- ভালবাসা।
জম্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
দেশবরেণ্য এই আলেমে দ্বীন ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার চাপাতলী গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত বুজুর্গ হযরত শাহ আছদ আলী ফকির রহঃ কোন এক সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাপাতলী গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে স্থানীয় অনেক মানুষকে ইসলামের আলোয়ে আলোকিত করেন। তিনি রাজকীয় জীবন- যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। প্রবাদ আছে যে, তিনি ঘোড়ায় চরে জুম্মার নামাজ আদায়ে মসজিদে যেতেন। তাঁরই এক ছেলের নাম গোলাম আলী। এই মহান আধ্যাত্বিক প্রাণপুরুষের উত্তরসূরীরা এ অঞ্চলের চাপাতলী গ্রামে বসবাস করে আসছেন। সেই বংশেরই একজন নূর আহমদ মুনশি আলকাদেরীর ঔরশেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন শেরে মিল্লাত , মুফতিয়ে আহলে সুন্নাত আলহাজ্ব ওবাইদুল হক নঈমী আল ক্বাদেরী ( রহঃ) জম্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা জীবনঃ
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ শিশুকালে নিজ গ্রামের মক্তবেই লেখা- পড়ার শুরু। পরবর্তীকালে ধর্মীয় শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে চট্টগ্রামস্থ পাঁচলাইশ ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে দাখিল, আলিম, ফাজিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন এবং সরকার কর্তৃক বুত্তি লাভ করেন। অতঃপর উচ্চ শিক্ষার্থে ১৯৬২ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের গুজরাট জামেয়া নঈমীয়ায় যেয়ে সেখানে ছয় মাস অবস্থান করেন এবং হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহঃ এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়ে হাদিস ও ইলমে ফিক্বহর উপর বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে আবার গুজরাট আল্লাহর অলি মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহঃ এর সান্নিধ্য লাভে চলে যান এবং ছয় মাস অবস্থান করে কোরআন- হাদীস ও ইসলামী আইনশাস্ত্রে ব্যাপক জ্ঞানার্জন শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬৫ সালে ওযাজেদিযা আলিয়া থেকে কামিল হাদিস সনদ অর্জন করেন এবং পরবর্তী সনে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল ফিক্বহ’ র উপর ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্ণাঢ্য কর্ম জীবনঃ
আগেই বলেছি, মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ েের জীবন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ, কর্মবহুল। তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল বিশাল, বিস্তৃত ও বর্ণাঢ্য। শিক্ষা জীবন পরিসমাপ্তির সাথে সাথে ১৯৬৬ সালে ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় এক বৎসর দক্ষতার সঙ্গে পাঠদান করেন। ইত্যিমধ্যে তাঁর জ্ঞানের সুনাম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী বৎসর অধ্যক্ষ আল্লামা ওয়াকার উদ্দিন রহঃ তাঁকে হাটহাজারী আজিজিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ হয়ে সেখানে পাঠদানে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। সেখানে বেশিদিন থাকতে পারেননি। কারণ, গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত শেরে বাংলা রহঃ এর নির্দেশক্রমে এবং অধ্যক্ষ মাওলানা নসরুল্লাহ খান রহঃ এর অনুরোধে ১৯৬৮ সালে এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে হাদিস, তাফসির ও ফিকাহ কিতাবের দরস বা পাঠদান করে আসছিলেন। তিনি কর্ম জীবনে অত্যন্ত দক্ষতা ও যত্নের সঙ্গে দরস দিতেন। তাঁর হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য শ্রোতাদের মন ছুয়ে যেত। তিনি কঠিন বিষয়ও অত্যন্ত সহজভাবে বুঝতেন এবং বুঝাতে সক্ষম ছিলেন। কোরান- হাদীস, ইলমে ফিকহের গভীর জ্ঞানের অধিকারী আল্লামা নঈমী হুজুর যে কোন বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজভাবে তুলে ধরে আলোচনা করতেন। শ্রোতারা তাঁর আলোচনায় আত্মতৃপ্তি অনুভব করতেন এবং জ্ঞানের দুয়ার খুলে যেত। তিনি একাধারে, শায়খুল হাদীস, একজন বিজ্ঞ অনুবাদক, শক্তিমান লেখক, দূরদর্শী ইসলামী চিন্তাবিদ, সুন্নী জনতার অভিভাবক, রাজনৈতিক, মানুষ গড়ার প্রকৃত কারিগর, মুক্তিযোদ্ধা, (১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ওস্তাদ ইমামে আহলে সুন্নাত কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী রহঃ সঙ্গে হাত রেখে মুক্তিযুদ্ধে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন)।
শেরে মিল্লাত নঈমী রহঃ এর সাংগঠনিক জীবনঃ
” যার দল নাই- তার বল নাই” এ চরম সত্য কথাটি দেশের লক্ষ লক্ষ আলেম – ওলামা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলেও শেরে মিল্লাত ভুল করেনি। তিনি আমৃত্যু ইসলাম তথা সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি আমাদের নেতা, অভিভাবক, ও পথপ্রদর্শক। তিনি ছিলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, দেশব্যাপী সুন্নি মুসলমানের ঐক্য সৃষ্টিতে তাঁর অবদান ছিল অনন্য। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক, সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা( ওএসি) ‘ র অন্যতম উপদেষ্টা, আলা হযরত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উপদেষ্টা, ওয়াল্ড ইসলামিক মিশন লন্ডন’ র অন্যতম সদস্য, চর্তুদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’ লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা রহঃ অনুসৃত মসলকে আ’লা হযরতের এক অন্যতম মুখপাত্র, গাউছে জমান কুতুবে দাওয়া খাজায়ে খাজেগান খাজা আবদুর রহমার চৌহরভী রহঃ এর প্রধান খলিফা কুতুবুল আউলিয়া সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহঃ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি , আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য, জামেয়া শরীয়া বোর্ডের প্রধান মুফতি ছিলেন। তাছাড়া তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম রাহবার, সুন্নী আন্দোলনের বীর সিপাহসালার, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত, বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক সংগ্রামী মহানায়ক আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ গোটা জীবন ইসলাম, সুন্নিয়ত, দেশ ও জাতির কল্যাণে উৎসর্গ করে গেছেন। সরবে- নিরবে স্ব- শরীরে ও লিখনীর মাধ্যমে সমান্তরাল ভাবে তাঁর পদচারনা। রুহানিয়ত তথা তরিকত ও সুন্নিয়ত, ইসলাম এবং জাতির প্রয়োজনে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে- ন্যায়ের পক্ষে, বাতিলের বিরুদ্ধে- হকের সংগ্রামে তিনি সব সময় ছিলেন আপোষহীন।
অনুবাদ, গ্রন্থ রচনা ও লেখা-লেখিঃ
তিনি আরবি, উর্দু, ফার্সী, ও বাংলা ভাষায় সমান পারদর্শি ছিলেন, প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ত্রিশপারা দরুদ শরীফের অদ্বিতীয় গ্রন্থ ” মজমুওয়ায়ে সালাওয়াতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রণেতা , উর্দু ও বাংলা ভাষায় তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মাসিক তরজুমান, মাসিক জীবন বাতি, মাসিক জ্ঞানের আলো, মদিনার পথে, আল মুখতার, রাহমাতুল্লিল আলামীন সহ বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও স্মরণিকায় অভিমত, ফতওয়া ও বাণী প্রকাশিত হয়েছে। মিলাদ- কিয়াম ও দরুদ- সালাম এর বৈধতার উপর তাঁর প্রামাণ্য গ্রন্থ ” দালায়েলুল কিয়ামলে মিলাদে খায়রিল আনাম” তাঁর অনবদ্য রচনা।
আধ্যাত্নিকতা বা বায়আত গ্রহণঃ
একজন খ্যাতিমান আলেমেদ্বীন এবং দেশের শীর্ষ মুফতি ও শাযখুল হাদীস যার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তিনিও রুহানিয়ত ও আধ্যাত্নিক পূর্ণতা লাভের জন্য এবং জাহেরী ইলমকে তিনি যথেষ্ট মনে করেননি। তাই আধ্যাত্নিক শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনে ১৯৭৬ সালে গাউছে যমান, মুর্শেদে বরহক আল্লাম সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ রহঃ এর হাতে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরীয়ায় বায়আত তথা তরিকতের দীক্ষা গ্রহণ করেন। তখন থেকে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি হুজুর কেবলা, জামেয়া আনজুমান, গাউছিয়া কমিটির প্রচার – প্রসারে মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে গেছেন।
সফর ও জিয়ারতঃ অসংখ্যবার মক্কা ও মদীনা শরীফ গমন করেন হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে । বায়তুল মুকাদ্দাস,বাগদাদ শরীফ, আজমীর শরীফ, সিরিকোট, চৌহর শরীফ, বেরেলী শরীফ সহ বিভিন্ন নবী- রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম, ও আউলিয়ায়ে কেরামগণের জিযারতে গমন করেন। দেশ- বিদেশে অসংখ্য আন্তর্জাতিক ইসলামী কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করে মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সৌদি আরব, ইরাক , ইরান ভারত, পাকিস্তান, য়েঙ্গুন, মাযানমার, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, নেপাল, লন্ডন, ওমান, কাতার, প্যালেস্টাইন ইত্যাদি রাষ্ট্র সফর করেন।
দেশ ও বিদেশে শোকের ছায়াঃ দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দরবারে সিরিকোট শরীফ,মাননীয় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবাইদুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাসান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মুহিবুল হাসান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান, মহাসচিব, চট্টগ্রামের মেযর, সংসদ সদস্য, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ, আনজুমানে খোদ্দামুল মোসলেমিন, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা, আলা হযরত ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীনগন, রাজনৈতিক, সামাজিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ ছাড়া ভারতের বেরেলী শরীফ , পাকিস্তান সিরিকোট দরবার শরীফ সহ বিভিন্ন দেশের তরিকতপন্থী- সুন্নী আলেম-ওলামা এবং নেতৃবৃন্দ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
জানাযা ও দাফনঃ শেরে মিল্লাত মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ এর নামাযে জানাযা ইন্তিকালের পরের দিন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঐদিন সোমবার রাতেই সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আনজুমান, তাঁর পরিবার ও শীর্ষ সুন্নি নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন রাত ১২ টায জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে ঘোষিত জানাযায় লক্ষাধিক মুসল্লির উপস্থিতি তাঁর প্রতি মানুষের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ অছিয়র রহমান এর নির্দেশনায় শেরে মিল্লাতের বড় সাহেবজাদা মাওলানা হামেদ রেজা জানাযার ইমামতি করেন এবং তৃতীয় সাহেবজাদা জামেয়ার শিক্ষক মাওলানা কাসেম রেজা মুনাজাত পরিচালনা করেন। শরীয়ত, তরিকত ও সুন্নিয়তের বহুমুখী খেদমত আনজাম দিয়ে মাওলায়ে হাকিকীর সান্নিধ্যে চির বিদায় নেন। তাঁকে তাঁর আজীবন কর্মস্থল জামেয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত করা হয়।
পরিশেষে বলতে চাইঃ শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহঃ এর ইন্তেকালে বাংলাদেশ হারালো তার এক সূর্য – সন্তানকে। সুন্নী জনতা হারালো এক মহান রাহবারকে। পরিশেষে প্রার্থনা, হে আল্লাহ এই শোক ও শূন্যতা পূরণে তোমার সাহায্য চাই এবং আপনি তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন; তাঁর সকল নেক আমল কবুল করুন। আমাদেরকে তাঁর অনুসৃত পথে চলার সাহস ও শক্তি দান করুন। আমিন।।
লেখকঃ গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সংগঠক।
প্রকাশনা সম্পাদকঃঃ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কুমিল্লা জেলা শাখা। প্রতিষ্ঠাতাঃ গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা। আহবায়কঃঃঃঃআদর্শ কলম সৈনিক( আকস), কুমিল্লা।
মোবাইলঃঃ 01718-228446