ইরাদের বিজয়ের গল্প– তাহরিমা ইসলাম

 

 

বিজয় দিবস আজ,লাল সবুজের আলোতে পুরো দেশ সাজানো।ইরার মনে খুব আনন্দ,বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাতে স্কুলের স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো ইরা। গ্রামের রাস্তা,তার বাড়িটাও বেশ ভিতরে। খুব ভোরে রাস্তায় রিক্সা বা ভ্যান পাওয়া দুষ্কর। বাধ্য হয়ে ইরা হেঁটেই রওনা করলো। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কুয়াশায় ঘেরা জঙ্গলের পাশ দিয়ে রাস্তা।কাছে যেতেই দেখলো গত বিজয় দিবসে যে ধনীর দুলাল ছেলেটা পাশের বাড়ির রূপাকে রক্তাক্ত করে পাশের জঙ্গলে ফেলে গিয়েছ সে দাঁত বের করে হাসছে।

 

 

ইরা ধীর পায়ে এগুচ্ছে আর আনমনে ভাবছে দেশ স্বাধীন, আজ বিজয় দিবস, স্বাধীনভাবে সে পৌঁছে যাবে ঠিক স্কুলে। ছেলেটার অনেকটা কাছে পৌঁছে গিয়েছ ইরা, কাছে যেতেই দ্রুত গতিতে পা ফেললো সে। এরপর চোখ খুলে দূর থেকে কাদের যেন এগিয়ে আসতে দেখলো সে.. দুপুর তিনটে! হাসপাতালের করিডোরের শয্যায় ইরা। ডাক্তার আসতে এখনো সময় লাগবে। বিকাল ৪.৩০, ডাক্তার এলো, হাসপাতালের গণরুমে নিয়ে যাওয়া হলো ইরাকে।তবে থানায় জিডি করা ছাড়া ডাক্তার রুগী দেখবেন না,জিডি করা হলো। ডাক্তার দেখলো,ঔষধ দিলো। থানা থেকে পুলিশ এলো, অচেতন ইরার চেতনা আসার সাথে সাথেই শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব – কি হয়েছিল? -কিভাবে হয়েছিলো? -স্মৃতি সৌধে যাবার এতো কি ছিলো,না গেলে কি হতো,হ্যা? – শেষ প্রশ্নটা ছিলো সত্যি এরকম ঘটনা ঘটেছিলো? ছেলের পরিবার তো বলছে ছেলে তার মামার বাড়িতে ছিলো,মামাতো বোনের বিয়েতে।

 

-আপনি ঠিক দেখেছিলেন তো? ইরা নির্বাক, চোখের কোণের জমে থাকা জলটা বেরিয়ে পড়লো এবার নার্স এসে হঠাৎ প্রশ্ন, -ইরার বাড়ির লোক কে আছেন?আপনাদের মেয়ের হাসপাতাল বিল ধরুন। টাকা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যান। ইরার বাবার কাতরস্বরে অনুরোধ -আপা বিল কিছুটা কমান আপা,আমরা গরিব মানুষ, ভিটে বাড়ি ছাড়া কিছু নাই আমাদের। – এটা হাসপাতাল,আশ্রয়খানা না,যান টাকা যোগার করে নিয়ে আসেন।আমার কিছু করার নেই।

 

ইরার বাবা তার শেষ সম্বলটা বন্ধক রেখে হাসপাতালের চাহিদা পূরণ করে বাড়ি নিয়ে এলো ইরা কে। পাশের ঘরের ছোট মিনু দৌড়ে এলো ইরাকে দেখতে,বড্ড ভালোবাসে সে ইরাকে।ইরা তাকে রোজ নিয়ম করে দু’বেলা পড়াতো পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে। দৌড়ে এলো মিনুর মা। -মিনু, এই মিনু, তোকে বলেছিনা আর এখানে পড়তে হবে না এই বাড়িতে,চল ঘরে চল। ঘরের মেয়ে ঘরে না থাকলে যা হয়,ছিঃ ইরা আবারও নির্বাক তাকিয়ে আনমনে ভাবছে – স্বাধীনতা কবে তুমি ইরাদের হবে! ৫০ বছর পরেও আমরা স্বাধীনতাটাকেই খুঁজেই চলছি,পাবো তো!