বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ — কাকলী আইচ চৈতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রাচীন বাঙ্গালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতির জনক বলা হয়ে থাকে। বাঙ্গালিকে তিনি জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত করেছেন এবং তাঁর ফলশ্রুতিতে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন আদর করে তাঁকে খোকা নামে ডাকতেন। বন্ধুরা ডাকতেন মুজিব ভাই এবং গ্রামবাসীরা ডাকতেন মিঞা ভাই নামে। বেগম ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন ৫ সন্তানের জনক।

১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সীতানাথ একাডেমীতে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৭ সালে কোলকাতা ইসলামীয়া কলেজ থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদের ছাত্র হিসেবে তিনি কিছুকাল পড়াশোনা করেন।

স্কুল ও কলেজ জীবনেই তাঁর নেতৃত্বের লক্ষণ প্রকাশ পায়। পাকিস্তান আন্দোলনকালে মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের নেতা হিসেবে তিনি যথেষ্ট অবদান রাখেন। তিনি রাজনীতির দীক্ষা গ্রহণ করেন শেরে বাংলা এ.কে ফজললু হক, হোসেন শহীন সোহরাওয়াদী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমূখ ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেছিলেন। উক্ত দলের সভাপতি ছিলেন মাওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। তরুণ বয়সে তিনি একবার মন্ত্রীত্ব লাভ করেছিলন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙ্গালী জাতির মুক্তি সনদ বিখ্যাত ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

পাকিস্তানের শাসকচক্র বাঙ্গালি জাতিকে দারিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারা বাঙ্গালি জাতির মুক্তি সনদ ছয় দফা কর্মসূচিকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং এ আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেওয়ার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ উদ্দেশ্যে তারা বাঙ্গালি জাতির জনপ্রিয় সংগ্রামী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বন্দি করে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটেছিল গণ অভ্যুত্থান। তখন তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বাংলার মানুষ তাঁকে ভালবেসে বঙ্গবন্ধু উপাধি দান করে।

 

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান ।

 

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গর্বিত নাগরিক আমরা। ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ বাংলাদেশকে সোনালী ফসলে ভরপুর দেখতে চেয়েছিলেন । সে কারণেই স্বাধীনতার পর তিনি ডাক দিয়েছেন সবুজ বিপ্লবের । তাঁর প্রণীত এ পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সবুজায়িত হবে সারা বাংলা, সুখে থাকবে বাংলার মানুষ। স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়িত হলে আমরা অনেকটুকু এগিয়ে যেতে পারবো কৃষি উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে সফলতায় । আর কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের দেশ উন্নত হবে, হবে স্বনির্ভর ।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় তিনি দেখতে চেয়েছিলেন দেশের কৃষি ও কৃষকের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা । বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পুরো দায়িত্ব এখন আমাদের সবার । কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় করাই হোক আমাদের চলমান অঙ্গীকার । তাঁর অদম্য ইচ্ছা ছিল যে কোন উপায়ে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা ।

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির উন্নয়নের অগ্রদূত হিসেবে আখ্যায়িত করত, সেই মহান ব্যক্তিত্বকে এ দেশের কিছু নরপিচাশ, অকৃতজ্ঞ ও স্বাধীনতা বিরোধীরা হত্যা করে গোটা বাঙ্গালি জাতিকে কলুষিত করেছে । বাংলাদেরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী দেশি-বিদেশী কুচক্রী মহলের পরিকল্পনা মাফিক পাকিস্তানের সামরিক আমলাতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারাকে এদেশে বলবৎ করার ষড়যন্ত্র হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রকৃত পটভূমি। মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার ইতিহাস ও চেতনাকে মুছে ফেলাই যে তাঁদের লক্ষ্য ছিল, তার জলন্ত প্রমাণ ১৫ ও ২১ আগষ্টের ঘৃণিত হত্যাকান্ড। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারসহ ১৫ আগষ্টে নিহত সব শহীদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ।

লেখিকা: কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজ (এইচএসসি পরীক্ষার্থী)
পিতা-জীবন চন্দ্র আইচ
ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)
গ্রাম-শালুচর, চান্দিনা, কুমিল্লা