হোসেনপুর বিদ্যালয়; বেশির ভাগ জমি দখল-খেলার মাঠে ইট বালি

 

ইলিয়াস হোসাইন।।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ৪নং দঃ খোশবাস ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়,১৯৯৫ সালে ৩৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২২-এ এসে বিদ্যালয়ের জায়গা ১৪ শতাংশে ঠেকেছে। প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক আছেন ৫জন। ২০১৮-২০১৯শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়টিতে ২শ’র বেশি শিক্ষার্থী ছিলো। বর্তমানে রেজিস্ট্রি খাতায় এই সংখ্যা ৯০জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ২৫-৩০জন।

সরেজমিনে দেখা যায়,বিদ্যালয় আছে, শিক্ষার্থী নেই! মাঠ যেনো এখন স্থানীয় কিছু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদ। গরু বাঁধা হতে ইট, বালি,সিমেন্ট, খড়ের স্তূপ স্থাপন করা হয়েছে। বারান্দায় পড়ে থাকে সিগারেটের খালি প্যাকেট। স্কুলের ৪-৫ গজ সামনেই চা দোকান। দোকানের শোরগোল,সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব আলম জানান,আমি বিদ্যালয়ের গভর্নিংবডির অভিভাবক সদস্য। আমার ছোট মেয়ে লামিয়া এই প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আমাদের সন্তানদের পড়া লেখা যেমন দরকার তেমনি পাশাপাশি মানসিক বিকাশে দরকার সুস্থ পরিবেশ। সার্বিক বিবেচনায় এই প্রতিষ্ঠান সবদিকেই পিছিয়ে। আরেক বাসিন্দা দেলোওয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দোকানের আড্ডা,মাঠ দখল শিশুদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. কায়সার হোসেন জানান,বিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং পড়া-লেখার মান বিদেশ যাওয়ার আগে অনেক ভালো দেখেছি,কিন্তু এখন বাড়িতে এসে বিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষার অবস্থা দেখে খুবই মর্মাহত হই! আরেক বাসিন্দা গোলাম জিলানী জানান,স্কুলের বাউন্ডারি না থাকায় শিশুরা বিভিন্ন দুর্ঘটনারও শিকার হয়।
দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আঁখি বলেন,”আঁই স্কুলে আইয়া মজা হাইনা। আমগো মাডে খেলোন যায় না।
খেলতে না পারলে ভালা লাগেনা। বারান্দায় বইসা বইসা বড় পোলাপানরা আড্ডা দেয়। সিগারেট খায়। সিগারিটের পঁচা গন্ধ সহ্য করতাম পারিনা।”
আরেক ছাত্র ফাহিম বলেন,অন্যস্কুল আমাদের স্কুলের চেয়েও অনেক সুন্দর। খেলা-ধুলার জন্য মাঠ আছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীও আছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার বলেন,আমি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দীর্ঘ ২৫বছর এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক হিসেবে ছিলাম। এখন সহকারী প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছি। আগে বিদ্যালয়ের মাঠ ছিলো। যথার্থ শিক্ষার্থীও ছিলো। বর্তমানে
বিদ্যালয়ে শিশু কমে যাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং করোনার কু প্রভাব দায়ী। বিদ্যালয়ের মাঠ থেকেও যেনো নাই! কিছু স্থানীয় ব্যক্তিদের মাঠ দখলের কারণে এখানের শিশুরা নিয়মিত খেলা-ধুলা করার সুযোগ পাচ্ছেনা। শিক্ষক সংকটের জন্য বাচ্চাদের যথাযথ পরিচর্যা করার সুযোগ হয়না। বিদ্যালয়ের সম্মুখ ঘেঁষে চায়ের দোকানের আড্ডা আমাদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটায়।

প্রধান শিক্ষক সমির দত্ত জানান,স্কুলে আনন্দ নিয়ে পড়ানো যায় ক্লাসে ভরপুর শিক্ষার্থী থাকলে। ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়েও অভিভাবকদের উৎসাহ-প্রেরণা দিয়েছি। তবুও অভিভাবকরা নারাজ। তারা আমাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রাইভেট স্কুল,কিন্ডার গার্টেন, মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার একে. এম. ফজলুল হক জানান,এই বিদ্যালয় আমি একবার পরিদর্শন করেছি। কিছু পারিপার্শ্বিক সমস্যা দেখেছি। এর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিদ্যালয় কমিটিকে দায়িত্বও দিয়েছি। তবে বর্তমান সমস্যাগুলোর বিষয়ে আমি অবহিত ছিলাম না। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য অবশ্যই অতি জরুরি পদক্ষেপ নেবো।